শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
কার্যকর পদক্ষেপ নিন

মশার উপদ্রব বৃদ্ধি

নতুনধারা
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

রাজধানীতে ফের মশার উপদ্রব বৃদ্ধির খবর জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, দিনে-রাতে সর্বত্র মশার দাপটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহণসহ সর্বত্র মশার উৎপাত সহ্য করতে হচ্ছে নাগরিকদের। এমনকি গণভবনেও মশার উৎপাত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালেও এর সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী- এমনটি যখন খবরের মাধ্যমে উঠে আসছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

উলেস্নখ্য, মশার উৎপাত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেই খাল পরিষ্কারের কাজ করা হচ্ছে। এতে ময়লা-আবর্জনাতে জন্ম নেওয়া মশা উড়ে বাসাবাড়িতে চলে যাচ্ছে। শীতকালীন সময়ে দেশের খাল ও জলাশয়গুলো শুকনো থাকে। বিশেষ করে কচুরিপানা ও পানিতে ভাসমান বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা থাকা মশাগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করছেন তারা। যদিও এডিস মশা নিয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটা লক্ষণীয়, তাদের এ দাবির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন কীটতত্ত্ববিদরা।

একজন কীটতত্ত্ববিদ বলেছেন, খাল পরিষ্কারের কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে এ ঠিক না। খাল পরিষ্কার করলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে লার্ভি সাইট (মশার ডিম ধ্বংস করার ওষুধ) প্রয়োগ করার কথা। মশার উৎপাত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতি বছরই এ সময় প্রাকৃতিকভাবে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। পচা পানিতে এ মশার বংশবিস্তার করে। এ সময় পানিতে অর্গানিক কমপাউন্ড বেড়ে যায়। এটা মশা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। মশক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে তিনি এটাও বলেছেন, প্রতি সাত দিন অন্তর অন্তর এডাল্টি সাইট ও লার্ভি সাইট প্রয়োগ করতে হবে। নিয়মিত জলাশয় ও পানি জমে থাকার স্থানগুলো পরিষ্কার করতে হবে। তবে একবার ওষুধ দিয়ে আবার ১০-১৫ দিন পর দিলে হবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে প্রতি সাত দিন পরপরই ওষুধ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন এ কীটতত্ত্ববিদ। আমরা মনে করি, বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শকে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

বলা দরকার, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহর এলাকার মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে চলতি সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ সভায় মশক নিধনে সিটি করপোরেশনগুলোর গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হোক। কেননা এটা মনে রাখা দরকার, এর আগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের হয়ে দেখা দিয়েছিল! একদিকে করোনার আতঙ্ক কাটেনি। অন্যদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে তা অত্যন্ত ভয়ানক হবে। ফলে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি।

জানা যাচ্ছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) গুলশান, বনানী, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, উত্তরা, তেজগাঁও, ভাসানটেক, বাড্ডা, রামপুরা, হাতিরঝিল ও বনশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরা এলাকার এক বাসিন্দার দাবি, দিনে-রাতে মশার অত্যাচারে ঘরে থাকা দায়। দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হয়। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ধানমন্ডি, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, পান্থপথ, মগবাজার, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, মাতুয়াইল, ধনিয়া, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগরসহ প্রায় সব এলাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও জানা যাচ্ছে, প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বেশ কয়েক দফায় মশার ওষুধ পরিবর্তনও করা হয়েছে। নিজেদের সুরক্ষার জন্য বাসাবাড়ির আঙিনাসহ সর্বত্রই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশসহ সারা বিশ্বই যখন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আবার মশার উপদ্রব বৃদ্ধি ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় যেমন সবার সচেতন হতে হবে, তেমনি মশার উপদ্রব রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে