বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ

ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে
নতুনধারা
  ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

গত সোমবার জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যক্ত করেন। দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দল-মতের পার্থক্য ভুলে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি দেশের সার্বিক অগ্রগতির পথে দুর্নীতি প্রধান অন্তরায়। ফলে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সূচকেও দেশের অগ্রগতি দৃশ্যমান, নানা ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমও অব্যাহত, তখন দেশ থেকে দুর্নীতি রোধ হয়নি। সরকারি-বেসরকারি নানা খাতে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে- এমন খবরও বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে।

সঙ্গত কারণেই, আমরা বলতে চাই- দুর্নীতি রোধে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, বিষয়টি আমলে নিয়ে দুর্নীতি রোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। এছাড়া রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে দল-মতের পার্থক্য ভুলে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্ব দেন- যা অনুধাবন করে মাদক সন্ত্রাসের মতো ভয়ানক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। আর এক্ষেত্রে বিরোধী দলকেও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। ফলে বিষয়টি আমলে নিয়ে বিরোধী দল সেই ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট থাকবে এমনটি কাম্য।

উলেস্নখ্য, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কথা যেমন বলেছেন, তেমনিভাবে দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার বিষয়টি তুলে ধরেন। আমরা বলতে চাই, দেশ ও জাতির সামগ্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথে এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এগুলো আমলে নিতে হবে এবং যার যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়া দেশের অগ্রগতির পথে যে সব সংকট আছে তা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপও অব্যাহত রাখতে হবে।

লক্ষণীয়, রাষ্ট্র্রপতি তার ভাষণে বলেছেন, জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। গণতন্ত্রায়ন, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করার কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, তার এই আহ্বানের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মহান জাতীয় সংসদে সরকারি দল ও বিরোধী দল যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই সরকারের অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জনের বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া সাফল্যের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দেশ- এটা উলেস্নখ করে তিনি বলেছেন, শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া এ বছর মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে 'স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী' পালন করার বিষয়টি তুলে ধরে, এ কথা মনে করিয়ে দেন- আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বিশ্ব সভায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হব এমন দৃঢ়তাও ব্যক্ত করেন। সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রপতি যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন তার ভাষণে, সেসব বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে