শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর মৃতু্য

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
নতুনধারা
  ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতো বলে আমরা মনে করি।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের পদ্মা অয়েল গেটের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর মৃতু্য হয়েছে।

আজ সোমবার আনুমানিক সকাল সোয়া ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন মো. আকাশ ইকবাল ও মায়া হাজারিকা। আকাশ ইকবাল পদ্মা সেতু প্রকল্পে এবং মায়া হাজারিকা হোটেল লেক ক্যাসলে চাকরি করতেন। নিহত দুজন কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলে রওনা দিয়েছিলেন। বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন টার্মিনালের কাছে যে ইউলুপ রয়েছে, সে জায়গায় আজমেরী বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা।

এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, ২০১৬ সালে ২৮৮টি, ২০১৮ সালে ৮৪৪টি এবং ২০২০ সালে ১০০৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালে মারা গেছেন ৩৩৬ জন, ২০১৮ সালে ৯৫৩ জন এবং ২০২০ সালে ১০৯৭ জন। এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এ ছাড়াও ২০২০ সালে সর্বমোট ৪ হাজার ৯২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৬৯ জন। করোনাকালে দুর্ঘটনাজনিত এমন মর্মান্তিক চিত্র কোনোভাই মেনে নেওয়া যায় না।

এ কথা স্বীকার করতেই হবে, সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা করা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বাড়ানো, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রম্নটি, একই রাস্তায় বৈধ ও অবৈধ এবং দ্রম্নত ও শ্লথ যানবাহন চলাচল, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট এবং অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন না হওয়া ইত্যাদিই এ বিপুলসংখ্যক দুর্ঘটনার মূল কারণ।

মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ এবং রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে