শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

দ্রম্নত শুরু হোক
নতুনধারা
  ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশার বাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না- এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে, এ ধরনের আশ্বাস বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাও বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মঙ্গলবার চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকের পর এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আমরা বলতে চাই, ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন আশাবাদ সামনে আসছে, তখন তা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা চাই, যত দ্রম্নত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি আছে, তা যদি অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়, সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিয়ে যেতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। গত তিন বছরে ৯০ হাজার নতুন বাচ্চাও জন্মগ্রহণ করেছে। সুতরাং, এই টোটাল নম্বরটা বাড়তে থাকবে, অনেক জটিলতা আসতে থাকবে। দ্রম্নত শুরু করাটার বিকল্প নেই। আমরাও মনে করি, এখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক।

উলেস্নখ্য, ভার্চুয়াল পস্নাটফর্মে দুপুর ২টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন। চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুও জাওহুইয়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উপমন্ত্রী হাউ দো সুয়ান। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানা যাচ্ছে, ফেব্রম্নয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্কিং গ্রম্নপের মিটিং হবে এবং সেটার ব্যাপ্তি কিছুটা বাড়বে। এটাও বলতে চাই, ছয় দফায় মোট আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার, যার মধ্যে ৪২ হাজারের ভেরিফিকেশন করেছে মিয়ানমার।

লক্ষণীয়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এখন সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রম্নত শুরু হোক এমনটি কাম্য।

কেননা, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, যত দিন পার হচ্ছে, রোহিঙ্গা সংকট তত তীব্র হচ্ছে। মনে রাখা দরকার, ১১ লাখ বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজছে- যা নিহিত রয়েছে বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বারবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া। রোহিঙ্গা যুবকরা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। গাছপালা, পাহাড়, টিলা, ভূমি কর্তন করে বেড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের আবাসন। তাদের আশ্রয়ে হাজার হাজার একর পাহাড় গাছ-গাছালি ধ্বংস, পশু-পাখির বিচরণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অতিথি পশুপাখির সেখানে আর ঠিকানা হচ্ছে না। বিলুপ্ত হচ্ছে এ সব পশুপাখি। খাল-বিল মিল-কারখানায় রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ছে। ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গারা অনেকেই এখন ছোটখাটো ব্যবসা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গা বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশের আলো, বাতাস, পরিবেশের ক্ষতি কতদিন আর জনগণ সহ্য করবে? এ ছাড়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রম্নত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে