গণতন্ত্র আরও সুসংহত হোক

অভিনন্দন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও অবশেষে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন জো বাইডেন। আমরা জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। উলেস্নখ্য, করোনাভাইরাস মহামারিকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সমসাময়িককালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠিন সংকটকালে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বয়সি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন এই ডেমোক্র্যাট নেতা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, শপথ নেওয়ার পর অভিষেক ভাষণে আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন 'আজ আমেরিকার দিন, গণতন্ত্রের দিন, ইতিহাস গড়া আর প্রত্যাশার দিন, নবসূচনা আর ক্ষত নিরাময়ের দিন।' তার ভাষণের সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য দিক হলো, তিনি গড়ে ওঠা বিভেদের প্রাচীর ভেঙে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। আমরা বলতে চাই, ৬ জানুয়ারি ছিল বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট ঘোষণার দিন, যে দিনটিতে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছে ট্রাম্প সমর্থকরা। গুলি চলেছে। পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে আইনপ্রণেতাদের। এমন এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্য জরুরি। কেননা, সবচেয়ে বড় কলঙ্ক লেপন হয়েছে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায়। যা রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ২০৬ বছরের ইতিহাসের। আমরা মনে করি, প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তা সফল করতে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন এবং অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলার মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে আরও বেশি সুসংহত করবেন। তিনি সবাইকে পাশে চেয়ে বলেছেন, 'আমরা আমেরিকার নতুন ইতিহাস রচনা করব। প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছি, সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।' বলার অপেক্ষা রাখে না, ৩ নভেম্বর ছিল আমেরিকার নির্বাচন। নানা নাটকীয়তা হয়েছে এ নির্বাচন নিয়ে। অন্যদিকে, ৬ জানুয়ারি ছিল বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট ঘোষণার দিন, যে দিনটিতে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছে ট্রাম্প সমর্থকরা। এছাড়া ব্যালট বাক্স থেকে আদালতের কাঠগড়া, রাজপথের তান্ডবসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের শপথের মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হলো ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার। যখন বৈশ্বিক মহামারি চলছে এবং নানাভাবে বিভেদের রাজনীতি স্পষ্ট, সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলা করার পাশাপাশি বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হবেন এমনটিও আমাদের প্রত্যাশা। উলেস্নখ্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ৭টি দেশের ওপর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার তিনি শপথ নেওয়ার অল্প পরেই এ বিষয়ক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এদিন তিনি কমপক্ষে ১৫টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত। ওভাল অফিসভর্তি সাংবাদিকদের সামনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশকিছু নীতি পরিবর্তনের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রথম গুরুত্ব দিয়েছেন করোনা মহামারি এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এর আগে জানা গিয়েছিল- জো বাইডেন নতুন অভিবাসন আইনের প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করেছেন, যা বাস্তবায়িত হলে সে দেশে বসবাসরত ১ কোটি ১০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসীর আট বছরের মধ্যে বৈধ হওয়ার পথ খুলবে। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, আমেরিকান রাষ্ট্র ও সমাজের অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি, জো বাইডেনের নেতৃত্বে নতুন মার্কিন সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ক্ষতগুলোও সারানোর উদ্যোগ নেবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়ে অ্যাশলে বাইডেন বলেছেন, তার বাবা একজন সহানুভূতিশীল মানুষ। তিনি অন্যের কষ্ট বোঝেন এবং অন্যের কষ্টে ব্যথিত হন। ফলে আমরা প্রত্যাশা করি, প্রেসিডেন্ট বাইডেন মানবতার প্রশ্নে উদার হবেন। যুদ্ধ-সংঘাত ও সামরিকায়নের পেছনে অর্থ ব্যয়ের চেয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করবেন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বড় উন্নয়ন সহযোগী। দুই দেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক। সঙ্গত কারণেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসন আমলে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এমনটি প্রত্যাশিত।