করোনাভাইরাসের টিকা

ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্ব ভয়ানক এবং বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশেও বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা। একদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি শক্তিধর দেশগুলোকেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকার বিষয়টি আশার সঞ্চার করেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও টিকা চলে আসার খবর জানা গেল। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বৃহস্পতিবার দেশে এসেছে করোনাভাইরাসের টিকা। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, প্রতিবেশী দেশ ভারতের উপহার হিসেবে দেওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান বৃহস্পতিবার সকালে এয়ার-ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকারের এ টিকা দ্রম্নতই দেশের মানুষকে দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। আমরা মনে করি, যখন করোনার সংক্রমণের দেশে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ এবং মৃতু্যও থেমে নেই- এমন পরিস্থিতিতে টিকা আসার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। এখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে টিকা প্রদান শুরু করা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ২০ লাখ ডোজ উপহারের টিকার বাইরে বাংলাদেশ সরকারিভাবে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনছে। যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছাতে পারে। ফলে ফেব্রম্নয়ারির প্রথম সপ্তাহে টিকাদান শুরুর পরিকল্পনা হলেও তা আগে পাওয়ায় প্রয়োগের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। বুধবার স্বাস্থ্য সচিব এক সভায় আগামী ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি টিকা প্রয়োগ শুরুর কথা জানিয়েছেন। জানা গেছে, প্রথম দিন চিকিৎসক, নার্স, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, সাংবাদিকদের একজন করে প্রতিনিধিকে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম দিন এরকম ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে টিকাদান উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। আমরা বলতে চাই, টিকাসংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয় আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে এবং যথাসময়ে টিকা প্রদান ও সুষ্ঠু বণ্টনও যেন নিশ্চিত হয় সেই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করতে চাই, এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছিলেন, 'মহামারির লাগাম টেনে ধরতে টিকা বেশ আশাব্যঞ্জক। তবে ধরিত্রীকে রক্ষায় বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঝুঁকিতে থাকা সবার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুন বছরে আমাদের অবশ্যই এ চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।' সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টরা টিকার সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখবেন। বলা দরকার, টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক একটি বিতরণ তালিকাও ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। সরকারের কেনা ও ভারতের উপহারের টিকার বাইরে কোভ্যাক্সের আওতায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাবে। সব মিলিয়ে এ টিকা দেওয়া যাবে ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষকে এমন তথ্যও উঠে এসেছে। এ হিসাবে দেশের অন্তত আট থেকে নয় কোটি মানুষকে যেন টিকা দেওয়া যায় সে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যায়, তাহলে সে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, করোনার টিকা নিয়ে নানা রকম গবেষণা চলে আসছিল, বিজ্ঞানীরা টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা করছিল অনেকদিন ধরে। এরপর বিভিন্ন দেশই টিকা তৈরির দাবি করে এবং করোনার ক্ষেত্রে কার্যকর কতটা সে বিষয়ে তথ্য আসে গণমাধ্যমে। এটা ঠিক, করোনা প্রতিরোধে টিকার বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বা করোনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিষয়ও এড়ানোর সুযোগ নেই। টিকা যেহেতু চলে এসেছে, এখন দেশের সংশ্লিষ্টরা সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে টিকার ন্যায্য বণ্টনের দিকে নজর দেওয়াসহ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখবে এমনটি কাম্য।