কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

চালের দাম বৃদ্ধি

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সামনে রেখে চালের বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়, তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বারবারই আলোচনায় আসে। অথচ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, চালের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্নআয়ের মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। জানা যায়, চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্তের রেকর্ড, হচ্ছে আমদানিও। আমদানি সহজ করার পর সরকারি বেসরকারিভাবে চাল আসছে দেশে। দেখা যাচ্ছে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি কিন্তু তারপরও বেড়েই চলছে অপরিহার্য খাদ্যপণ্যের দাম। যা অত্যন্ত উদ্বেগের। সম্প্রতি চালের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ও খবরে উঠে এসেছে। চলছে দোষারোপের খেলা। সরকার, ভোক্তা ও চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে মিল মালিকরাই দায়ী। তাদের কারসাজিতে চালের দাম লাগামহীন। আর চালকল মালিকরা অভিযোগ করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে মূল্য নির্ধারণ ও বাজার মনিটরিং না থাকায় চালের দাম বাড়ছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রম্নত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দায় চাপানোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের খেলায় চালের দাম এখন অনেকের নাগালের বাইরে- এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার, একদিকে করোনাকালে নানা কারণেই মানুষের পরিস্থিতি দিশাহারা প্রায়। আবার যদি চালের দামের কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস ওঠে তবে তা কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়- দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে সরকার। বেসরকারিভাবে চালের আমদানি শুল্ক আগের ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে সরকারিভাবে চাল আমদানিতে শুল্ক কমেছে ৩৭.৫ শতাংশ। আমদানি শুল্ক কমানোর পর চাল আমদানিতে হিড়িক পড়ে ব্যবসাীয়দের মধ্যে। রোববার পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ১০ লাখ ১৪ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে আসছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার টন। লক্ষণীয়, পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আমদানির খবরে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বাজারে কমে। কিন্তু আমদানিকৃত চাল খুচরা বাজারে প্রবেশের একদিন যেতে না যেতে আবারও বাড়ছে চালের দাম এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। জানা গেছে, আমদানিকৃত চাল ভালো মানের না হওয়ার কারণে ফের বস্তাপ্রতি দেশি চালের দাম ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। এছাড়া খবরে উঠে এসেছে, ব্যাংক ঋণ নিয়ে ধানের বড় মজুত গড়ে তুলেছেন মিল মালিকরা। তারা কারসাজির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। ব্যাবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চালের ঘাটতি রয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন। তাই বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক এ বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিম্নআয়ের মানুষের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ এমনিতেই পরিবারের সব ব্যয় মেটাতে হিমশিম খায়। এছাড়া দরিদ্র পরিবারের অনেকে ঋণ করেও নিত্য-নতুন ব্যয় মেটাতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় যদি চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয় অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। ফলে চালের দামের বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যদি চালের দাম না কমে, তবে দিশাহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এমনটি স্বাভাবিক। এর আগে এমন বিষয়ও উঠে এসেছে, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না। আমরা মনে করি, চালের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যত দ্রম্নত সম্ভব বাজার মনিটরিংয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া; একইসঙ্গে চালের বাজার সহনীয় রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখা।