বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

করোনায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উত্থান-পতন

নতুনধারা
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি সেই দেশের অর্থনীতি। সুতরাং অর্থনৈতিক অবস্থা যত উন্নত হবে, সেই দেশ তত বেশি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। দেশের এই সমৃদ্ধি লাভের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাত বিভিন্নভাবে অবদান রেখে চলছে। এর মধ্যে রয়েছে সেবা খাত, শিল্প খাত, কৃষি খাত। এই খাতগুলো যখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের কাজের পরিধি প্রসারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তখন সেই দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি হয়। দেশে সেবা খাতের অবদান অস্বীকার করার মতো নয়। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে এ সেবা খাত ৫০ ভাগেরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। সেবা খাত অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যদিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৫ ভাগেরও বেশি। যেটা দেশের অর্থনীতিতে সেবা খাতের পরই অবস্থান করছে। কিন্তু এই করোনা মহামারিতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার একদম নিম্নপর্যায়ে চলে গেছে। আমদানি-রপ্তানি সব কিছুতেই দেশ পিছিয়ে পড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় লকডাউনের কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল এই এক মাসে অর্থনীতিতে ১ লক্ষাধিক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর ওই সময় কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে। অথচ নতুন অর্থবছরের শুরুতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল দেশের সেই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা। এর সঙ্গে দেশের কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অনেক বেসরকারি কোম্পানির আয় ও বিনিয়োগের উৎস কমে যাওয়ায় কর্মী ছাঁটাই করে দিচ্ছে। এতে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হতে চলছে অনেক পরিবার। যেখানে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের ভিতরে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্ষমতা লাভ করার কথা ছিল, সেখানে করোনার কারণে দরিদ্রতা আগের চেয়ে বেড়ে ভয়াবহ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিতে এক বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস) বলেছে, মহামারির আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। কিন্তু সংক্রমণ শুরুর পর টানা দুই মাসের সাধারণ ছুটিতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ায় দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়ে গেছে ২৯ শতাংশ। (বিআইডিএস) সংস্থাটি আরও বলছে দেশে করোনা মহামারিতে নতুন করে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। যা আগের দারিদ্র্যসীমার ২০ শতাংশ মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে হয় প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ। অর্থাৎ বর্তমানে দেশে ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেকটি বড় উৎস গার্মেন্টশিল্প। এই গার্মেন্টশিল্প তৈরি পোশাক বিভিন্ন দেশে রপ্তানির মধ্যদিয়ে অর্থনীতিতে এক বিরাট অবদান রেখে চলছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে গার্মেন্টশিল্প থেকে। তবে মহামারি করোনার কারণে গার্মেন্টশিল্পেও এক বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের এ শিল্প ইউরোপ এবং আমেরিকাকেন্দ্রিক। কিন্তু সেসব দেশে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে বহু ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার বাতিল অথবা স্থগিত করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি গার্মেন্ট শ্রমিক। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারে এমনিতেই মন্দাবস্থা লেগে থাকে। কিন্তু করোনায় আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শেয়ারবাজার। এতে হতাশাগ্রস্ত অনেক বিনিয়োগকারী। রাজস্ব খাতও দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলছে। তবে করোনার কবলে বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, সরকার অন্যান্য সময়ের মতো রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। সরকার এই রাজস্ব থেকে মূলত দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যয় করে। যেহেতু করোনায় রাজস্ব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে দেশের উন্নয়নে। এই ছিল করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বিপর্যয়ের চিত্র। আবার অন্যদিক থেকে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে এবং আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক হিসেবেও বিবেচনা করা হয় প্রবাসীদের পাঠানো এ রেমিট্যান্সকে। কিন্তু ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে এ রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমতে থাকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। ওই সময়টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। এতে কাজ হারায় অনেক প্রবাসী। এই থেকে ধারণা করা হয়েছিল, ২০২০ সালে রেমিট্যান্সের নিম্নপ্রবাহ হবে। সবার এ ধারণা মিথ্যে করে দিয়ে, পরবর্তী মে মাস থেকে অন্যান্য মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্রমোন্নত দেখা যায়। ২০২০-২১ নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মোট ২.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স আগে কখনই আসেনি। যা রেমিট্যান্স প্রবাহে তৈরি করেছে এক নতুন রেকর্ড, যার ফলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। করোনার পরিস্থিতিতে যেখানে দেশের প্রায় অর্থনৈতিক খাত বিপর্যয়ের মুখে, সেখানে রেমিট্যান্স উলেস্নখযোগ্য হারে অন্যান্য খাতের চেয়ে ভালো অবস্থান দখল করে আছে। এমন প্রতিকূল সময়ে রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বপ্রবাহ দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় পাওয়া। করোনার সংক্রমণ চলমান থাকায় দেশের অর্থনীতির এ সঙ্কটাপন্ন দশা কবে নাগাদ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আর্গের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করা হয়।

মাইন উদ্দীন হাসান

শিক্ষার্থী

\হইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে