এদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে এখনই

বিগত ১২ বছর ধরে বর্তমান সরকার দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এগিয়ে চলেছে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে। বর্তমান সরকার নিয়োজিত আছে মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে, কল্যাণে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্স্নোগানে। সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে অনাবিল হাসি ফোটানোর জন্য। তিনি দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তাদের ভাগ্যোন্নয়নে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে।

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মাহবুব-উল-আলম খান
করোনাভাইরাসের করাল গ্রাসে পৃথিবী আজ তছনছ, ছিন্নভিন্ন, বিপর্যস্ত। এক অসহায় মহাদুর্যোগে নিপতিত হয়েছে গোটা বিশ্ব। এমন মহাসংকট পৃথিবী সৃষ্টির পর আর হয়েছিল কিনা জানা নেই। মানবজাতির ইতিহাসে সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য এ এক অশনি সংকেত। পৃথিবীর মানুষ আজ জীবন-মরণ সমস্যায় জর্জরিত। এ মরণব্যাধি ভাইরাসে জীবনের স্বাভাবিক গতিধারা, স্বতঃস্ফূর্ত জীবনপ্রবাহ দৈনন্দিন জীবনের কর্মযজ্ঞ, উন্নয়নের চলমান চাকা থমকে দিয়েছে। পৃথিবী কি অস্তগামী? এই আলো-বাতাস, এই প্রকৃতির স্বাভাবিক গতিধারায় মানবজাতি কবে আবার ঘুরে দাঁড়াবে? মানবজাতি তার সৃষ্টির মাহাত্ম্য, সৃষ্টির উন্মাদনা কবে ফিরে পাবে? পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি সবাই তাকিয়ে আছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। আর প্রার্থনা করছে হে মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের দয়া করো, করুণা করো এবং এই মরণব্যাধি বন্ধ করো। আমরা বাঁচতে চাই আগামী এক সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। আমাদের জীবনের গতিধারাকে চালিয়ে যেতে চাই আবহমানকাল। আমাদের সৃষ্টিকে স্তব্দ করে দিও না বিধাতা। আমরা জীবনের নিশ্চয়তা চাই, জীবনের স্বার্থকতা চাই, নানাবিধ জাগতিক কর্মকান্ডে, উন্নয়নে ও মানবকল্যাণে। বিধাতা ছাড়া এর উত্তর কারও জানা নেই। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও করোনার ভয়াল ছোবল আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। কেউ কাউকে সহায়তা করতে পারছে না। মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার সংগতি অনেকেরই নেই। করোনার সুযোগে অনেকে আবার হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে যাচ্ছে। ভাই ভাইয়ের হক খেয়ে ফেলছে। বেহায়ার মতো একে অন্যের ওপর চোটপাট করছে। মনুষ্যত্বের বিকাশ নেই। সৌজন্যের লেশমাত্র নেই। নিজেকে পশুর থেকে অধম করে ফেলেছে। দুস্থ অসহায়ের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ লুটপাট করে খাচ্ছে। সরকারের মহতী মানবিক প্রয়াসগুলো ব্যর্থ করে দিচ্ছে। অন্নহীনে অন্ন দাও, বস্ত্রহীনে বস্ত্র দাও, গৃহহীনে গৃহ দাও, শাশ্বত সুন্দর কথাগুলো কতিপয় লুটেরা ভুলে যাচ্ছে। লোভ, লালসা আত্মসাৎ কতিপয় লোককে পশুতে রূপান্তরিত করেছে। এরা ত্রাণ চুরি করে, অর্থ আত্মসাৎ করে নির্লজ্জের মতো। এরা শয়তানে পরিণত হয়েছে। এদের মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই। ধরা পড়েও এদের লজ্জা হয় না। ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে খালেদা-নিজামী সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধে উদ্ভাসিত বিভিন্ন ক্যাডারের শত শত কর্মকর্তাদের চাকরিচু্যত করে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পেলেও বিএনপি-জামায়াত তাদের পুনর্বাসিত করেনি। বর্তমান সরকার আদালতের রায় বাস্তবায়ন করেছে কিন্তু উপযুক্ত পদে পদায়ন করেনি। মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়েছেন। জাতি এদের সেবা হতে বঞ্চিত হয়েছে। এর মাশুল সরকারকে এখনো দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন ক্যাডারে নিজামীর প্রেতাত্মারা ভোল পাল্টে টুকে গেছে ও সংগোপনে খালেদা-নিজামীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে। সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কার্যকর না হলে সরকারের মহতী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল ব্যাহত হচ্ছে। এর জবাব কে দেবে? তাই সরকারকে অবিলম্বে সব আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে আলোকিত প্রশাসন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত গণমানুষের জন্য কল্যাণকর সুশাসন। রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে প্রশাসন যন্ত্রকেও হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগসন্ধানী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী খালেদা-নিজামীর এজেন্টরা স্যাবোটেজ করেই যাবে। এরা স্বার্থান্বেষী মহলকে বিভিন্নভাবে হাত করে অবাধে বিচরণ করছে। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাপটি মেরে থাকা স্বার্থান্বেষী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দালাল রাজাকার, আলবদরের সন্তানরা, খালেদা নিজামীর এজেন্টরা অবাধে স্যাবোটেজ করে যাচ্ছে। তাই তো বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম বালিশ কেলেঙ্কারি, মাস্ক কেলেঙ্কারি ও নানাবিধ প্রতারণাজাতীয় বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এসব অশুভ শক্তিকে আর বাড়তে দেওয়া যায় না। তাই সব আগাছা পরিষ্কার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত সৎ, নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে হবে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। মা-বোনদের বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে, সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। এরা মুসলমান নামের কলঙ্ক। তাই মানুষ হিসেবে, মুসলমান হিসেবে এসব অসভ্য বর্বরদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। এরা ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের সর্বনাশ করে। বিভিন্ন মাদরাসা, কওমি মাদরাসা ও এতিম খানায় এরা বলাৎকার, ধর্ষণসহ নানাবিধ অসামাজিক কুকর্ম চালায়, এদের হাত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ, শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে। এরা ইতর বদমাস মানুষরূপী শয়তান। এদের অপতৎপরতা চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে হবে। রক্ত দিয়ে কেনা মহান স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে। এদের খতম করার লড়াই ইমানি লড়াই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করার লড়াই। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রিয় নবীর উম্মত হিসেবে, একজন মুসলমান হিসেবে এ পবিত্র দায়িত্বই পালন করে গেছেন। তার আদর্শের সৈনিক হিসেবে দেশ ও জাতির কল্যাণে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সদা জাগ্রত। তাই জামায়াত হেফাজতজাতীয় সব অপশক্তিকে পরাজিত করে আমাদের এগোতে হবে আগামী এক সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে। এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বাঙালি জাতির পিতাকে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা হত্যা করেছে, কিন্তু তার আদর্শকে অবিনাশী চেতনাকে কেউ হত্যা করতে পারবে না। সত্য ও সুন্দরের কোনো ভয় নেই, পরাজয় নেই। এ অপশক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় জেলায় থানায় থানায় গর্জে উঠেছে নতুন প্রজন্মের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। বিগত ১২ বছর ধরে বর্তমান সরকার দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এগিয়ে চলেছে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে। বর্তমান সরকার নিয়োজিত আছে মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে, কল্যাণে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্স্নোগানে। সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে অনাবিল হাসি ফোটানোর জন্য। তিনি দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তাদের ভাগ্যোন্নয়নে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে। অতএব, হে অপশক্তি এবার তোমরা সভ্য হও। জীবন জীবনের জন্য, মানুষ মানুষের জন্য আর দেশরত্ন শেখ হাসিনা সকল মানুষের জন্য, বাঙালির জাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা শুদ্ধ হও। পবিত্র হও হে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সদস্যরা, দোসররা, ভাবশিষ্যরা এবং বাংলাদেশ নটরিয়াস পার্টির লুটেরা সদস্যরা। নতুবা তোমাদেরই অপকর্মের জন্য এ দেশের জাগ্রত জনতা তোমাদের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে। লুণ্ঠিত হাজার হাজার কোটি টাকা, অর্থ সম্পদ অবিলম্বে ফেরত দাও। বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপনের হিসাব দাও, কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চাও। এবার তোমরা মানুষ হও। মাহবুব-উল-আলম খান : মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সচিব