খাদ্য উৎপাদন

আরও বাড়াতে হবে

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বাষির্ক এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি জানায়, ঘূণির্ঝড়কে শস্য ক্ষতির সবচেয়ে বড় হুমকি বিবেচনা করেছে তারা। এ ছাড়া খরা ও বন্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, গত বছর মাচের্র শেষ দিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের ছয় জেলার ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়। ওই সময় থেকেই বাড়ছে চালের দাম। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতনিভর্র বাঙালি যদি চাহিদামতো চাল কিনতে না পারে কিংবা কিনতে হয় উচ্চমূল্যেÑ তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী? এর আগে দেশবাসীকে এমন চড়া দরে চাল কিনতে হয়নি কখনই। মোটা চালের দাম বিশ্বে এখন বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে মোটা চালের দাম নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একদিকে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে বাইরে থেকে চাল আমদানি বাড়ছে এটা কোনোভাবেই সমথর্নযোগ্য নয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্ হতে হবে আমাদের। কমাতে হবে আমদানি নিভর্রতা। বাংলাদেশের মূলত উপক‚লীয় অঞ্চলে ঘূণির্ঝড় বেশি হয়। এতে সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা মিঠা পানিতে জমা হচ্ছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে খাদ্য উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যেখানে প্রাকৃতিক দুযোর্গ বেশি হয় সেখানে মানুষ পুষ্টিহীনতায় বেশি ভোগে। এ ছাড়া যেসব দেশের জনসংখ্যার বিশাল অংশ কৃষিক্ষেত্রের ওপর নিভর্রশীল সেসব দেশেও প্রাকৃতিক দুযোের্গর কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা যায়। খরার মতো দুযোর্গকেই আগে শুধু শস্য ধ্বংসের দুযোর্গ মনে করা হতো। কিন্তু অন্যান্য প্রাকৃতিক ?দুযোর্গ, বিশেষ করে ঘূণির্ঝড়ের বিষয়টিকে কখনই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ঘূণির্ঝড় সিডর ও আইলার আঘাতে বাংলাদেশে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপক‚ল চাষাবাদের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছিল। জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে বাংলাদেশে ধান উৎপাদন কম হলে প্রায়ই চালের দাম বেড়ে যায়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এখানকার মাটিতে লবণ ও দরিদ্রতা বেশি হওয়ায় তাদের ঝুঁকি বেশি। গত ২০ বছরে সাতক্ষীরার মাটিতে লবণ অনেক বেড়েছে। দেশের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুযোের্গর শিকার হয়। এই বিষয়টি সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। জনগণের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিলে এবং ভেজাল ও বিষযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে জীবনঝঁুকি বেড়ে গেলে তার দায় রাষ্ট্র তথা সরকারকেই নিতে হবে। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বতর্মান প্রেক্ষাপটে খাদ্য আইন বাস্তবায়ন জরুরি। খাদ্যপণ্যে ভেজাল জনস্বাস্থ্যের জন্য এ মুহূতের্ প্রধান হুমকি। এ হুমকি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সামাজিক সচেতনতার অভাবে তা কোনো কাজে আসছে না। আমরা মনে করি খাদ্য উৎপাদনের দিকে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জলবায়ু পরিবতের্নর দিকেও। খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।