বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজিৎ হত্যা মামলার রায় জঙ্গিবাদ সমূলে উৎপাটন হোক

নতুনধারা
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

আলোচিত অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, এই মামলার রায়ে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচু্যত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ পাঁচজনকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছেন আদালত। মৃতু্যদন্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আর সরাসরি জড়িত না থেকেও হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় বস্নগার শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

উলেস্নখ্য, ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনালের বিচারক মজিবুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

এই মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, আসামিরা সাংগঠনিকভাবে অভিন্ন অভিপ্রায়ে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে। সে কারণে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য। আর অপর আসামি বস্নগার শফিউর রহমান ফারাবীকে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত না থাকলেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিজিৎ রায়কে 'হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন' বলে তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়। বলা দরকার, আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরামকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলে। বাকি চার আসামি রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, দন্ডিত আসামিদের মধ্যে জিয়া, সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিবকে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার রায়েও মৃতু্যদন্ড দেওয়া হয়েছে।

উলেস্নখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়কে। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী। অভিজিৎ রায় নিহতের ঘটনার পর হত্যা মামলা দায়ের করেন অধ্যাপক অজয় রায়। হত্যাকান্ডের চার বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগের পক্ষে ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবু্যনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ওই বছর ১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় ছয় আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেন। অভিযোগপত্রে নাম থাকা রাষ্ট্রপক্ষের ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর কারাগারে থাকা চার আসামি গত ২৭ জানুয়ারি আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। ৩ ফেব্রম্নয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খান জাকির আসামিদের মৃতু্যদন্ড চেয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করেন। পরদিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, এমন নৃশংস হত্যাকান্ড কতটা ভয়ানক তা এড়ানোর সুযোগ নেই। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সবাই মিলেমিশে বসবাসের সংস্কৃতি বিদ্যমান। ফলে যে কোনো ধরনের উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ সমূলে উৎপাটন করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশে অখন্ডতা, সংহতি ও জননিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বস্নগার, প্রকাশক ও লেখক হত্যাকান্ডের ঘটনা ছাড়াও, বিভিন্ন সময়েই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। হলি আর্টিজানসহ নানা ঘটনায় জঙ্গিদের নৃশংসতা প্রকাশ পেয়েছে। ফলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি কোনোভাবেই যেন জঙ্গিবাদ দেশে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এটা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, জঙ্গিবাদ বা যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ড একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কেউ যেন দেশের সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করতে না পারে, জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে না পারে- এই বিষয়গুলো সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ যে কোনো ধরনের উগ্রপন্থির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে