বিদায় খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন যোদ্ধা

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চলে গেলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি ছিলেন কচিকাঁচার মেলার একজন পরিচালক। ৮০ বছর বয়সি ইব্রাহিম খালেদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের শুরুতে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হলেও নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। গত ২১ ফেব্রম্নয়ারি তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন তিনি। তার মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার শোকবার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা এ দেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। \হ১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভূগোলে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। ১৯৬৩ সালে যোগ দেন ব্যাংকিং পেশায়। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন ইব্রাহিম খালেদ। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে বিভিন্ন সময়ে ইব্রাহিম খালেদ আলোচনায় এসেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন যোদ্ধা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বহুমুখী কর্মজীবন ছিল বর্ণাঢ্য। ২০১১ সালে বাংলা একাডেমি ইব্রাহিম খালেদকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়। বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখে বড় হয়েছেন তিনি। তাই বঙ্গবন্ধুর সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম আর গণসংশ্লিষ্টতা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে সব সময়। এজন্যই যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই তিনি দুর্নীতির প্রশ্নে আপসহীনতার ছাপ রেখেছেন, বাকিদের জন্য রেখে গিয়েছেন অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। আর্থিক খাতের অসঙ্গতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সদাসোচ্চার বরেণ্য নাগরিক হিসেবে দেশবাসীর কাছে সম্মানিত ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে যারাই কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে সবাই এ কথা স্বীকার করবেন যে, নিজের নৈতিক শক্তি তিনি অন্যদের মাঝে সঞ্চারিত করতে সদা সচেষ্ট থেকেছেন। তার দ্বারা তরুণরা উপকৃত ও অনুপ্রাণিত হয়েছে। এ দেশের কৃষি খাত ও প্রান্তিক কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে তার নিষ্ঠা ও একাগ্রতা সত্যিই মনে রাখার মতো। আমরা মনে করি, তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায় হবে তার দেখানো পথে নিঃশঙ্ক চিত্তে এগিয়ে যাওয়া, তার নীতি ও আদর্শকে অনুসরণ করা। এমন একজন আদর্শবান ও নীতিবলিষ্ঠ মানুষ পেতে হয়তো বা আমাদের বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।