শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুদকের ৩০ সুপারিশ

স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের দুর্নীতি রোধ হোক
নতুনধারা
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে জনসাধারণের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্য খাতের স্বচ্ছতা ও অনিয়ম রোধের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া মনে রাখা দরকার, দেশের জনস্বাস্থ্য ঠিক রাখা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রশ্নে ওষুধ খাতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই যখন স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে এসব বন্ধে ৩০টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ২৫, আর ওষুধ খাতের জন্য ৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে- তখন তা যৌক্তিক বলেই প্রতীয়মান হয়।

এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ তুলে ধরে দুদক। ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি বিদ্যমান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কিছু কর্মচারী একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে স্থানীয় দালালদের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্র তৈরি করে। তারা সাধারণ রোগী বা তাদের স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বেআইনিভাবে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করে থাকে। টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয় করে থাকে- এমন বিষয় উঠে এসেছে। এ ছাড়া আরও ভয়ানক তথ্য হলো, হাসপাতালগুলোতে সরকার নির্ধারিত ওষুধ দিলেও রোগীদের দেওয়া হয় না। কেননা ওই সব ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করে রেজিস্টারে হিসাব মিলিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া কিছু ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি নকল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত করে থাকে এমনটিও উঠে এসেছে।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে এ বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। কেননা, এগুলো কতটা ভয়ানক পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে, বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের জন্য যে ৩০টি সুপারিশ করা হয়েছে তা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এমনটি কাম্য। সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া সমীচীন, প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে মেধা যাচাই না করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলেই আমরা মনে করি।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোধে ২৫ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- একজন নির্দিষ্ট চিকিৎসক দৈনিক কতজন রোগী দেখবেন এবং তার ফি কত হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, চিকিৎসকদের (সরকারি/বেসরকারি) পদোন্নতির জন্য সরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে পিএসসি এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং পিএসসির প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ প্রদান করা, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের ট্রেড নাম না লিখে জেনেরিক নাম লেখাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধ খাতের দুর্নীতি রোধে ৫ সুপারিশ হলো, মানহীন ওষুধ যেন কোনোভাবেই বাজারে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেও বিকল্প পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ওষুধ কারখানা নিয়মিত পরিদর্শন করার ব্যবস্থা, ফার্মেসিগুলো মনিটরিংয়ের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা, খোলাবাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি নিষিদ্ধ করা ও চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ফার্মেসি অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ওষুধ বা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনবিহীন কোনো ওষুধ যাতে বিক্রি করতে না পারে তা ব্যবস্থা করা।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের দুর্নীতি রোধ না হলে তা কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে সামনে আনবে সেটা বলাই বাহুল্য। এর আগেও স্বাস্থ্য খাতের নানা বিষয় এবং ভেজাল ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে এসব বন্ধে যে ৩০টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক

এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে