শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তাপ নিত্যপণ্যের বাজারে

মীর ইমরান আলী শিক্ষার্থী আহ্‌ছানউলস্না বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

করোনার মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন কমেছে, সে সময় উত্তাপ বইছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাঝেমধ্যেই সময় উত্তাপ বইছে নিত্যপণ্যের বাজার। জিনিসের দাম বাড়া মানে ভোক্তাদের কষ্ট বাড়া। বিশেষ করে নিত্যপণ্যর দাম বেড়ে গেলে স্বল্পআয়ের মানুষের জীবনে যে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয় তা এক কথায় অসহ্য। কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, নানা নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। বাজারে মোটা চালের কেজিপ্রতি ৫৪-৫৬ টাকা। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গভীর সংকট সৃষ্টি করছে। উচ্চ মধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তরা সঞ্চয় ভেঙে খরচ মেটাতে পারলেও কর্মহীন মানুষ পড়েছে মহাসংকটে। করোনার মধ্যে নিত্যপণ্যর দাম বেড়েছে বহুগুণ যা দিশাহারা করে তুলছে ভোক্তাদের। বিশেষ করে রোজা শুরুর আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটি অসাধু ব্যবসায়ীদের কৌশল। রমজান মাসে দাম বাড়ালে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় বলে তারা নানা কৌশলে রমজান শুরুর আগেই পণ্যের আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নাগালের মধ্যে রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আসন্ন রোজায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে মাঠে জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। টিসিবির মাধ্যমে সুলভমূল্যে বিপণন সক্ষমতা দিগুণ করা হচ্ছে, পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়টিও নজরদারিতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরে চালের যৌক্তিক মূল্য ঠিক করতেও কাজ করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একটি যৌথ কমিটি। এটি অবশ্যই প্রশংসা করার মতো উদ্যোগ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এই মহৎ উদ্যোগের বাস্তবায়ন কতটুকু হতে পারে? রমজান আসতে বেশি দেরি নেই। মানুষজন এমনিতেই মহামারি করোনার নানা সংকটে আছে। তার ওপর রোজা সামনে রেখে দ্রব্যেমূল্য বেড়ে গেলে সেইটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেবে। পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ যদি ঠিক রাখা যায় তাহলে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। এজন্য টিসিবিকে কার্যকর করে একটি প্যারালাল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার কথা বারবার বলা হলেও কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। এজন্য সিন্ডিকেট পোয়াবারো। তারা যে কোনো অসিলায় যে কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সামনে রমজান মাস। এ সময় বিশেষ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখতে হবে যেন রমজানে এসব পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি না থাকে। আর দামও থাকে নাগালের মধ্যে। যদিও এ বছর পেঁয়াজের বাজার তুলানামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারাকে নানামুখী কলাকৌশল ও পদক্ষেপের সুফল হিসেবে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরই ধারাবাহিকতা কতদূর থাকবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন আশঙ্কা কাজ করা স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, শুধু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। রমজানে নানামুখী অপতৎপরতা দেখা যায়। দাম বেড়ে যায় বিশেষ বিশেষ পণ্যের। পণ্যে পরিবহণেও নানা সমস্যা দেখা যায়। পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির। পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন নয়। কিছুসংখ্যক পুলিশের এই অসাধু কাজের জন্য গোটা পুলিশবাহিনী সমালোচিত হয়। তাই দুষ্টের দমন করতে হবে। এ ছাড়া পণ্যে চাঁদাবাজির মাশুল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই দিতে হবে। অন্যদিকে সিন্ডিকেটধারীরা ওত পেতে থাকে বিশেষ মৌসুমের সুযোগ নেওয়ার জন্য। তারা যাতে সেই সুযোগ নিতে না পারে এ জন্য বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে আগের তুলনায় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কাজেই রোজা শুরুর আগে যাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানো কৌশল বাস্তবায়ন করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে এখন থেকেই। পণ্য পরিবহণ নির্বিঘ্নে রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে