বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৫০ বছর

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
নতুনধারা
  ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

শুরু হয়েছে অগ্নিঝরা মার্চ। এবারের মার্চ মাস নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। এবার ২৬ মার্চ বাঙালি উদযাপন করবে স্বাধীনতার ৫০ বছর। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাবহুল মাস। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ এক হটকারী সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার আপামর জনতা। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ২৫ মার্চ পর্যন্ত নানান ঘটনার মধ্যদিয়ে ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১ মার্চ, ১৯৭১ পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদে যোগদানের অস্বীকৃতি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ, ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন। ২ মার্চ, ১৯৭১ সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি। কারফিউ ভেঙে বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন। বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশ, গুলিবর্ষণ। পল্টনে জনসভা ও গণমিছিলের ডাক, ভাষণ দেবেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৩ মার্চ, ১৯৭১ বিভিন্ন স্থানে মিছিলে গুলিবর্ষণ, ঢাকায় ২৩ জন নিহত, চট্টগ্রামে ৭৫ জন। ঢাকা, সিলেট ও রংপুরে কারফিউ জারি। ৪ মার্চ, ১৯৭১ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ১১৩নং সামরিক আইন আদেশ জারি। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা ১২১, খুলনায় নিহত ৬। ঢাকায় কারফিউ প্রত্যাহার। ৫ মার্চ, ১৯৭১ টঙ্গীতে গুলিবর্ষণ, ৪ জন নিহত ২৫ জন আহত। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৮। রাজশাহী রংপুরে আবার কারফিউ। ৬ মার্চ ১৯৭১ জাতির উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়ার ভাষণ, ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের ডাক। জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ। টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ। ৭ মার্চ, ১৯৭১ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণদান।

বাঙালির জাতীয় জীবনে অবিস্মরণীয় এক দিন ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনেই ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে রচিত হয়েছিল রাজনীতির এক ঐতিহাসিক মহাকাব্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংমাম'-এই কথাগুলো উচ্চারণ করে কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন, 'আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রম্নর মোকাবিলা করতে হবে।' ৭ মার্চের এমন ঘোষণা শুধু বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই দেওয়া সম্ভব ছিল। কারণ দিনে দিনে তিনি নিজেকে চালকের আসনে নিয়ে এসেছিলেন, জাতিকে স্বাধীনতার জন্য তৈরি করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে বিশ্বের ইতিহাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের অন্যতম বলে গণ্য করে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ভাষণই বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত করেছিল মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও তা প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এর পর বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাস্তবিকই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। যাত্রাপথের যাবতীয় আবর্জনাকে পরিষ্কার করে উন্নয়নের গতিকে মসৃণ করতে হবে। এখানে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ও দৃঢ় নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। কোনো অন্যায় বা অসত্যকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। খাদ্যে ভেজাল, মাদক, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ইত্যদি সব ইসু্যতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থেকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। একটি জনকল্যাণমূলক আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনোযোগী হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে