বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

এক বছর ধরে বন্ধ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা খাতে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢালাওভাবে খুলছে না। তথ্য মতে, পর্যায়ক্রমে ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শনিবার রাতে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া জানা গেছে, আসন্ন রোজার পুরো সময় ছুটি থাকবে না। কারণ এমনিতেই অনেক সময় চলে গেছে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে খোলা হবে, এর বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেছেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- আগে পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। সপ্তাহে ছয় দিন এই ক্লাস চলবে। অন্যান্য শ্রেণিতে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। এসএসসি ও এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হয়েছে। এসএসসির ৬০ দিনের ক্লাস শেষে এবং এইচএসসির ৮০ দিনের ক্লাস শেষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনার টিকাদান সম্পন্ন হবে। এছাড়া স্কুল-কলেজ খোলার আগে থেকেই প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারও সম্পন্ন করতে হবে। আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছুই বেসামাল হয়ে পড়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে পুরো বিশ্ব। নানা খাতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা খাতও থমকে যায়। যদিও অনলাইন ক্লাসসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দরুন নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়নই কাম্য।

এটাও আমলে নেওয়া দরকার, করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে- যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে গত বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষাও হয়নি। গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফল এ বছর ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা ওপরের শ্রেণিতে উঠেছে। ফলে সামগ্রিক বিষয়গুলো অনুধাবন করে শিক্ষা খাতকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি থাকুক এমনটি কাম্য।

প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার, এর আগে এক সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছিল যে, দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্রম্নত ক্লাসে ফিরতে চায়। অর্থাৎ তারা স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। আর ৭৬ শতাংশ অভিভাবক ও ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে ৫৮ শতাংশ শিক্ষক ও ৫২ শতাংশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সতর্কতার সঙ্গে স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে বলেছেন। ফলে এই প্রশ্নও সামনে এসেছিল- আর কতদিন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে! আমরা মনে করি, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়ে। বাস্তবতা আমলে নিয়ে শিক্ষা খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ প্রয়োজনীয় সচেতনতার বিষয়টি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম প্রথম মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বেশি পরিলক্ষিত হলেও দিন দিন উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে- এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবন করে যথাযথভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাককু এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে