মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক সুরক্ষা ভাতা যথাযথ পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ০২ মার্চ ২০২১, ০০:০০

সুবিধাবঞ্চিত মানুষ সামাজিক সুরক্ষা ভাতা পাচ্ছেন না, অন্যদিকে যারা ভাতা পায় তাদের ভেতর বড় অংশের এই ভাতার প্রয়োজন নেই- এমন বিষয় যখন জানা যাচ্ছে, তখন তা কতটা পরিতাপের বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই এ বিষয়টি আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, সুবিধাবঞ্চিত দেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ সামাজিক সুরক্ষা ভাতার বাইরে রয়েছেন। আর যারা ভাতা পাচ্ছেন, তাদের বড় অংশেরই এই ভাতার প্রয়োজন নেই। এরপরও তারা নিচ্ছেন। এতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় হচ্ছে। উলেস্নখ্য, রোববার সকালে 'করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ : স্বাস্থ্য ও শিক্ষা' শীর্ষক অনলাইন সংলাপে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ডক্টর শামসুল আলম এসব কথা বলেছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এমনিতেই করোনার কারণে পুরো বিশ্বে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। থমকে গেছে নানা খাত। মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। এর আগে এমন বিষয়ও উঠে এসেছিল, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে সত্যিকারের যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ঢুকতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে যত দ্রম্নত সম্ভব একটি ডেটাবেজ তৈরির তাগিদও দিয়েছিলেন তারা। যখন আবার এটা সামনে আসছে, যাদের প্রয়োজন নেই তারা ভাতা পাচ্ছেন, অন্যদিকে ৪৬ শতাংশ সুবিধাবঞ্চিত মানুষ এই ভাতার বাইরে রয়েছেন- তখন বিষয়টি কতটা দুঃখজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়া সমীচীন। ফলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে যেন অপচয় না হয় সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

এমন বিষয়ও উঠে এসেছে, একটা গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় আছে। ফলে ২০২৫ সালের সব দারিদ্র্য সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক এমন আশাবাদ সামনে এসেছে। আর যাদের এর আওতার বাইরে থাকা দরকার, তাদের চিহ্নিত করে বের করার উদ্যোগ নিতে হবে- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির যেন সঠিক ব্যবহার হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কেন সুবিধাবঞ্চিত ৪৬ শতাংশ মানুষ এই ভাতা পাচ্ছেন না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে এবং যাদের প্রয়োজন নেই তারা কেন নিচ্ছেন এটিও আমলে নিতে হবে। সার্বিকভাবে এই কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। এই বিষয়টি এড়ানো যাবে না যে, বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই নিম্ন-আয়ের বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। ক্রমে ক্রমে বেকার হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদেরও অনেকে- এমনটিও আলেচনায় এসেছিল। এ ছাড়া করোনা মহামারির মুখে দেশে বেকার হয়ে পড়া নিম্নআয়ের অনেক মানুষকেই পথে পথে সাহায্য চাইতে বা ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে- এটাও আলোচনায় আসে। অভাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং পরিবারের উপার্জন কমছে- এমন পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের সেটা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। ফলে যখন জানা যাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত দেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ সামাজিক সুরক্ষা ভাতার বাইরে রয়েছেন- তখন করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামাজিক সুরক্ষা ভাতা যেন সত্যিকারের যোগ্য ব্যক্তিরা পায় তার জন্য দ্রম্নত পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে যখন মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে দিশাহারা, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তখন যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য, তারা বাইরে থাকবে আর যাদের প্রয়োজন নেই তারা ভাতা পাবে, এটা হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে