শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে নিপীড়নের শিকার শিশুরা দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ০২ মার্চ ২০২১, ০০:০০

প্রযুক্তির বিস্তারের সঙ্গে অনলাইনে নারী ও শিশু হয়রানি এবং নির্যাতনের ব্যাপকতা দিনকে দিন বাড়ছে। করোনা মহামারিতে কন্যাশিশুসহ সব শিশুর অনলাইনে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে গেছে। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই আইনে অনলাইনে শিশুদের দ্বারা শিশু নির্যাতনের বিষয়টিকে চিহ্নিত করে আলাদা কোনো বিধান রাখা হয়নি। ফলে ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, করোনাকালে ৩০ শতাংশ শিশু অনলাইনে নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নিপীড়নের শিকার হওয়া শিশুদের ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়েশিশু। ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছেলেশিশু। করোনাকালে অনলাইনে শিশু নির্যাতনবিষয়ক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিশু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বলে ফলাফলে উঠে এসেছে। ৮৮ শতাংশ শিশু করোনাকালে অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনলাইনে শিশু নিপীড়নের ধরন সম্পর্কে বলা হয়, শিশুদের ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, অশালীন প্রস্তাব, সাইবার বুলিং, বস্ন্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি এবং কোনো না কোনোভাবে যৌনতাবিষয়ক ছবি ও তথ্য দেখতে পাওয়া। অনলাইনে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার শিশুদের ৪১ শতাংশ পরবর্তীকালে তাদের অভিভাবক ও স্বজনদের বিষয়টি জানিয়েছে। তার মধ্যে ৬ শতাংশ শিশুর পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ কথা সত্য, বেশি বয়সি শিশুরা কম বয়সি শিশুদের চেয়ে অধিক মাত্রায় অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তবে সার্বিকভাবে সব শিশুই ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০২০ সালে আসকের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়েশিশু অনলাইনে যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। করোনাকালে জরিপে দেখা যায়, এই হার প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে। শিশুরা এভাবে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

যতই দিন যাচ্ছে সমাজে শিশু নিপীড়ন ও নির্যাতনের হার বাড়ছে। কেবল নির্যাতন নয়, শিশু হত্যার সংখ্যাও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। গত বছর গড়ে মাসিক শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে ২০ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গড়ে ৪৫৭ জন করে ৩ হাজার ৬৫৩ শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৩৮১ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। এটা সত্য, সমাজের এক শ্রেণির বর্বর পাষন্ড মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও চলে যাচ্ছে। সমাজে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঠুনকো কারণে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আপনজনের হাতেও শিশুর জীবন চলে যাচ্ছে। কেবল তাই নয়- আমাদের কোমলমতি শিশুরা অবলীলায় নানাভাবে নানা মাধ্যমে নিপীড়ন নির্যাতন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অথচ শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজ তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কারণ আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ কান্ডারি। শিশুর সুস্থ বিকাশ কীভাবে হবে, কীভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে- এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের নতুনভাবে ভাবা উচিত। পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে