বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির প্রশ্নে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমাগত দ্বিতীয়বারের মতো নেমেছে। সূচকে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ১০০-এর মধ্যে ৫০ পয়েন্ট অর্জন করেছে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, ২০১৮ সালে এই স্কোর ছিল ৫১ দশমিক ৬- যা আগের বছরের স্কোরের তুলনায় ০ দশমিক ৩ কম। এ বছর এটি আরও ১ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমেছে। তবে সূচকে খাদ্য নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সরকারি নীতি প্রতিশ্রম্নতি, খাদ্যের পুষ্টিমাণ ভালো থাকা, খাদ্যশস্য নষ্ট কম হওয়া ও কৃষি উৎপাদনে অস্থিরতা কম থাকা অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে- যা ইতিবাচক। বলা দরকার, কর্টেভা এগ্রিসায়েন্সের পৃষ্ঠপোষকতায় দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গত ২৩ ফেব্রম্নয়ারি জিএফএসআই-২০২০ প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে। নববার্ষিক বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক (জিএফএসআই) এই তথ্য প্রকাশ করেছে। আমরা বলতে চাই, যখন এমনটি জানা যাচ্ছে যে, দ্য ইআইইউ ২০১২ সাল থেকে তিনটি ক্যাটাগরি বিবেচনা করে জিএফএসআই প্রকাশ করছে। তখন এই ক্যাটাগরিগুলো আমলে নিতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশের সংশ্লিষ্টদের আরো বেশি মনোযোগ দেওয়া ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উলেস্নখ্য, যে তিনটি ক্যাটাগরি বিবেচনা করে ডিএফএসআই, তা হলো- খাদ্য সামর্থ্য, প্রাপ্যতা এবং গুণমান ও সুরক্ষা। এছাড়া এ বছর নতুন করে চতুর্থ ক্যাটাগরি হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু অভিযোজন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা আমলে নেওয়া সমীচীন, খাদ্য নিরাপত্তার এই সূচকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিও হ্রাস পেয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আর নতুন সংযোজিত ন্যাচারাল রিসোর্সেস ও রিসিলিয়েন্স ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পয়েন্ট অর্জন করেছে। এতে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৭তম অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু অভিযোজন সম্পর্কে রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতির অভাব, ৬৫ শতাংশ জমিতে দূষণ, সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কৃষিজল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এ অবস্থান এমন বিষয় উঠে এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া দেশে নিরাপদ পানি পায় এমন জনগোষ্ঠীর হার ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এমনটিও জানা গেছে। তবে সূচকে দেখনো হয়েছে ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বিদু্যৎ ব্যবহার করছেন যাতে করে খাদ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারেন। এটা লক্ষণীয় যে, খাদ্যপ্রাপ্যতা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বোচ্চ। ১১৩টি দেশের মধ্যে ৩৬তম। ভালো সেচ ব্যবস্থাপনা ও কৃষি অবকাঠামো, খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে পয়েন্ট অর্জন হয়েছে। তবে এটাও আমলে নেওয়া দরকার, সূচকে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা যেমন রাস্তা, বন্দর, রেল অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্নীতি হ্রাস ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা উলেস্নখ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাসহ যে বিষয়গুলো নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এসবের উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে যে, বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সামগ্রিক অগ্রগতির প্রশ্নেই অপরিহার্য বিষয়। এছাড়া দুর্নীতির বিষয়টি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। সামগ্রিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে দেশের অবস্থানকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ফুড সেফটি নেট কর্মসূচি থাকায় যেমন পয়েন্ট অর্জিত হয়েছে, তেমনি কর্মসূচির দুর্বল বাস্তবায়ন ব্যবস্থার কারণে অবস্থান পিছিয়ে পড়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। এছাড়া সূচকে বাজারে ও কৃষি ক্ষেত্রে আর্থিক পরিষেবা এবং কৃষকদের বিভিন্ন আর্থিক পণ্যে যেমন ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখানো হয়েছে। সঙ্গত কারণেই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকবে এমনটি কাম্য।