শিক্ষার্থী বহিষ্কার

প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতি রোধে সরকার কঠোর

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, জালিয়াতি ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির দায়ে ৭ জন, বেশ কিছু অভিযোগে আরও ৫ জন ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৫১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নেয়। ডিবির সুপারিশের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে সাত কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থীকেও স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। আগে দুই দফায় আজীবন বহিষ্কৃত ৭৮ জন, এবারের বহিষ্কার হওয়া ৭ জন এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া ২ জন। এই ৮৭ জনের প্রত্যেকেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা মামলার আসামি। ভাবতে বিস্ময় লাগে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। এটা জাতির জন্য লজ্জার। যে করেই হোক এটা সম্পূর্ণভাবে রোধ করতে হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থেই। অত্যন্ত পরিতাপের ব্যাপার এই যে, নীতি আদর্শের কথা চিন্তা না করে শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ধ্বংস করতে ভূমিকা রেখেছে। কিছু কিছু অভিভাবককেও পরীক্ষার আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের খোঁজ করার জন্য সন্তানদের উসকে দিতে। তারাও সরাসরি এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এমন একটা সময় ছিল প্রায় প্রতিটি বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করার চেয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি ব্যস্ত থাকত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের খোঁজে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়েছিল পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, মিছিল প্রভৃতি অরাজকতা। এই ধরনের আত্মবিধ্বংসী প্রবণতা জাতি গঠনের অন্তরায়। আশঙ্কার বিষয় হলো, বর্তমান প্রজন্ম কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগে শিক্ষা জীবনেই অনিয়ম জালিয়াতি ও দুর্নীতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতির এক অভিনব পদ্ধতি প্রশ্নপত্র ফাঁস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এ ওয়েবসাইটগুলো প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে সক্ষম হতো না, যদি এতে পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের যোগসাজশ না থাকত। স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলোর সত্যিই আমাদের অবাক করে এবং নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। আশার কথা, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে পুরস্কার ঘোষণা এবং আইনের কঠোর পদক্ষেপ। প্রশ্নফাঁস রোধে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা মনে করি, নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি পরীক্ষা কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের সুষ্ঠু পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখা জরুরি। তা না হলে নীতি-আদর্শ বিবর্জিত ও মেধাশূন্য জাতিতে পরিণত হবো আমরা- যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।