সুন্দরবন বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের

বাঁচতে গেলে আমাদের বিশুদ্ধ পানি লাগবে, খাদ্য লাগবে, শ্বাস নেওয়ার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস লাগবে, আমাদের অস্তিত্বের জন্য বন লাগবে, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান লাগবে। তাই আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুন্দরবনকে বাঁচাই, নিজেরা বাঁচি।

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০

শফিকুল ইসলাম খোকন
দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলের বেড়িবাঁধ না থাকলে যেমন জনভূমি এবং জনবসতি থাকত না, সাগর যদি মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হতো, তবে সাগরের সম্পদ টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়ত, সুন্দরবনে যদি বাঘ না থাকত, তবে এ বনকে টিকিয়ে রাখা যেত না- তেমনি সুন্দরবন যদি না থাকত তাহলে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে উপকূলের কোনো চিহ্ন থাকত না। আজ সেই মায়ারূপী সুন্দরবন হারিয়ে যেতে বসেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ইতিমধ্যেই বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করেছে। জনশ্রম্নতি রয়েছে 'সুন্দরবন যদি না থাকত হয়তো সিডরসহ প্রাকৃতির দুর্যোগে উপকূলের কোনো চিহ্নই থাকত না।' যে বনটি চোখে আঙুল দিয়ে সেই চোখরূপী ভয়ঙ্কর সিডরকে বুঝিয়ে দিল আর উপকূল অঞ্চলকে রক্ষা করল আজ সেই সুন্দরবন নিজেই এখন ধ্বংসের পথে। সুন্দরবন আমার মায়ের মতন। মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখে, তেমনি সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে। সুন্দরবন; আমার মা, আমার অহঙ্কার। শিশুরা যেমন নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে নিরাপদে থেকে খেলা করে, গড়াগড়ি খায় ঠিক তেমনি করেই বাঘরা গর্জন করে, হরিণরা এঁকে দেয় মায়াভরা চাহনি, সাদা বক তার সফেদ ডানা মেলে উড়ে যায় পানির আয়নার উপর দিয়ে, হরদম চলে বানরের নিবিড় উলস্নাস, সবাই এখানে স্বাধীন, ঠিক মায়ের শাসনে যেমনটা স্বাধীন থাকে। এভাবে সুন্দরবন সিডরে উপকূলের মানুষকে মায়ের মতন আগলে রেখেছে। সুন্দরবন (মা) আমাদের অঢেলভাবে ভালোবেসেছে, এবার আমাদের ভালোবাসার পালা। একইসঙ্গে সুন্দরবন দেশের অর্থনীতি, প্রাণিবৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমানভাবে অবদান রাখছে। দেশের স্বার্থেই এ বনকে টিকিয়ে রাখা আমাদের জরুরি। সুন্দরবনের এই সাম্প্রতিক আগুন লাগার ঘটনাটিই নতুন নয়। বনজীবী, সুন্দরবন অঞ্চলের আশপাশের স্থানীয় মানুষ, বন বিভাগ ও গণমাধ্যমসূত্র মিলিয়ে দেখা যায় গত ১৪ বছরে প্রায় ১৮ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। 'সুন্দরবননিউজডটকম' নামে একটি অনলাইনভিত্তিক নিউজপোর্টাল সরকারি ও বেসরকারি সূত্র দিয়ে জানিয়েছে, ১০ বছরে ১৬ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। ২০০২ সালের ২২ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে আগুন লাগে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রায় এক একর বন। ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ আগুনে পুড়ে যায় চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী ক্যাম্পের মাদ্রাসারছিলা অঞ্চলের ৩ একর বন। ২০০৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর আড়ুয়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৯ শতক বন। ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী অঞ্চলে পুড়ে যায় আড়াই একর বন। একই সালের ১৩ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলার পুড়ে চার একর বন। এরপর ২০০৬ সাল থেকে লাগাতার বন পুড়তেই থাকে। প্রথমত ১৯ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের তেরাবেকায় পুড়ে এক একর বন। একই সালের ১১ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহলফাঁড়ি অঞ্চলে পুড়ে ৫০ শতক বন। আবারো ১২ এপ্রিল কলমতেজি টহলফাঁড়ির খুটাবাড়িয়া এলাকায় পুড়ে দেড় একর। কলমতেজিতে এর আগের বছরই পুড়েছিল আড়াই একর বন। ২০০৬ সালের পহেলা মে একই রেঞ্জের নাংলী ফাঁড়ির পচাকুড়ালিয়া এলাকায় পুড়ে ৫০ শতক বন এবং ৪ মে ধানসাগর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় পুড়ে আড়াই একর বন। ২০০৭ সালেও তিনবার আগুন লাগার ঘটনা জানা যায়। এই সালের ১৫ জানুয়ারি শরণখোলার ডুমুরিয়া ক্যাম্প এলাকায় ৫ একর, ১৯ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী এলাকায় ২ একর ও একই অঞ্চলে ২৮ মার্চ পুড়ে যায় ৮ একর বন। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে আগুন লাগার ঘটনা জানা যায় না। আবারো ২০১০ সালের ২০ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী এলাকায় পুড়ে যায় ৫ একর বন। ২০১১ সালেও তিনবার আগুন লাগে। ১ মার্চ নাংলী অঞ্চলের ২৫নং কম্পার্টমেন্টে পুড়ে প্রায় ২ একর এবং একই সালের ৮ মার্চ আড়ুয়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৩ একর বন। ২০১৪ সালে আবারো ২০০৪ সালের মতো কালরাত্রি নেমে আসে। ভোলা নদী থেকে প্রায় দুই কি.মি. ভেতরে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালীর পয়ষট্টিছিলা অঞ্চলে ২৫ মার্চ পুড়ে যায় ১০ একর বন। ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেখা যায় সুন্দরবনের প্রায় ৬০ একর বনঅঞ্চল আগুনে পুড়েছে বা ঝলসে দেওয়া হয়েছে। সবশেষ ২০১৭ সালের ২৬ মে সুন্দরবনের নাংলী ক্যাম্পের মাদ্রাসারছিলা এলাকায় আগুনে প্রায় ৪ একর বনভূমি পুড়ে যায়। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে ২০০২ সালে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায়, ২০০৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় এবং আড়ুয়াবের খালে, ২০০৫ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের আড়ুয়াবের খালের পশ্চিমে তুলাতলা ও খুটাবাড়ি এলাকায় আগুন লাগে। এরপরের বছর ২০০৬ সালেই তেরাবেকা খালের পাড়ে, আমুরবুনিয়া, কলমতেজিয়া, পচাকুড়ালিয়া বিল ও ধানসাগর স্টেশন এলাকায় মোট ৫টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালে বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী নলবন, পচাকুড়ালিয়া বিলে অগ্নিকান্ড ঘটে। ২০১০ সালে ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী, ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, ২০১৪ সালে আবারও ধানসাগর স্টেশনসংলগ্ন বনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালেও ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, পচাকুড়ালিয়া, তুলাতলী এবং ২০১৭ সালে একই স্টেশনের মাদ্রাসারছিলা নামক স্থানে আগুন লাগে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি আবারও ধানগারস স্টেশন এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৪ শতক বনভূমি পুড়ে যায় সুন্দরবনের। এই হিসাবে ২০০২ সালের ২২ মার্চ থেকে ২০২১ সালে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ২০ বছরে ২৪ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সুন্দরবনে। এত অগ্নিকান্ড, কতবার বনভূমি উজাড় হয়েছে। তদন্ত কমিটি হচ্ছে, তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে, প্রতিবেদনে সুপারিশমালাও দেওয়া হয়, কিন্তু কোনো কাজের কাজ হচ্ছে না। গত ২০ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগে ২৪ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকান্ডে সুন্দরবনের ৭১ একর ৭০ শতাংশ বনভূমির গাছ, বিভিন্ন ধরনের ঘাস, লতাপাতা পুড়ে যায়। এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা। এদিকে অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও ভবিষ্যতে অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা এড়াতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা এড়ানো যেত বলে দাবি সুন্দরবন বিশেষজ্ঞদের। প্রতিটি অগ্নিকান্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদনও পেশ করে। সেসব প্রতিবেদনের প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায় না। ফাইলবন্দিই থেকে যায়। সবশেষ অগ্নিকান্ডের পরে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে আগুন লাগার মূল কারণ হিসেবে মৌয়ালিদের ব্যবহৃত আগুনের কুন্ডলী, জেলেদের সিগারেট, দাবদাহ, বৃষ্টিহীনতা, খরা, বন অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা, বাঘ তাড়ানোর জন্য আগুন ধরানো, গাজী কালুর উদ্দেশে বনের মধ্যে শিন্নি পাক, দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে বনের মধ্যে আগুন ধরানোকে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া বর্ষাকালে মাছ শিকারের সুবিধার্থে স্থানীয় চক্রের যোগসাজশে আগুন লাগানোর বিষয়টিও উঠে আসে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। হাস্যকর হলেও বলতে হয়, ওই সব তদন্তগুলো তদন্ত হওয়া উচিত। আসলে তদন্তে কোনো গাফেলতি আছে কিনা, তদন্ত টিম এলে কোনো পক্ষের পক্ষভুক্ত হয়েছে কিনা, কি কারণে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পরেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। আমি মনে করি, সুন্দরবন যেহেতু আমাদের মায়ে মতো আগলে রাখে তাই আমাদের মাকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষার জন্য বন বিভাগসহ সরকারি অনেক বাহিনী আছে কিন্তু কোনো কাজের কাজ হচ্ছে না। তাই সুন্দরবন রক্ষার্থে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। যাদের কাজ হবে স্পেশাল শুধু সুন্দরবনের জন্যই। এ বাহিনী সুন্দরবন রক্ষার জন্যই তৈরি হবে। ঘনবসতির চাপে প্রাণিবৈচিত্র্য বিলুপ্ত হওয়ার সম্মুখীন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক ধরনের 'লাইফ সাপোর্ট' দিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। এটি বনজ, মৎস্য ও পশুসম্পদের একটি বিশাল আধার। জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা এটিকে আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে। অথচ আমরা সুন্দরবনকে করছি অবহেলা। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে সংরক্ষণ করার কোনো বিশেষ পরিকল্পনা না থাকলেও অবহেলা অবিচার করতে আমাদের কুণ্ঠা হচ্ছে না। বিস্ময়কর হলো, ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশবিদদের পুনঃপুন সতর্কতাকেও উপেক্ষা করা হয়েছে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ যে যেভাবে পারছে লুণ্ঠন করছে। এমনকি এটি এখন ব্যবহার হচ্ছে নৌযান চলাচলের রুট হিসেবে। ২০১৮ সালে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জাহাজডুবির ঘটনায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটারের বেশি ফার্নেস অয়েল ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে সমৃদ্ধ এ বনকে বিপন্নের মুখোমুখি করেছে। সুন্দরবনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ পরিবেশগত বিপর্যয়ে প্রাণিবৈচিত্র্যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা যায়, তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকাটি সরকার ঘোষিত ডলফিনের অভয়ারণ্য। তেলের আস্তরণ বনের শ্বাসমূলীয় গাছপালার শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত করবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এছাড়া তেলের প্রভাবে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাবে, এতে করে মাছসহ জলজ প্রাণীও অক্সিজেন সংকটে ভুগবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে রক্ষাবু্যহ হিসেবে বিবেচিত সুন্দরবন আক্রান্ত হলে বাংলাদেশের জন্য তা হবে ভয়ঙ্কর অশনিসঙ্কেত। সুন্দরবন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য এবং জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। জাতিসংঘের ওই দুই সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরবনের ভেতর এ এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর বন আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (সিবিডি), ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশনের নিয়ম লঙ্ঘন করে বনের ভেতর দিয়ে নৌপথ চালু করে। এমনকি, সহযোগী একটি পত্রিকার মতে, ১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে নৌপথটি বন্ধের জন্য নির্দেশ দিলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি। বরং আমরা লক্ষ্য করেছি, রামপাল বিদু্যৎ কেন্দ্রসহ বনবিনাশী বিভিন্ন তৎপরতা থেমে নেই। এ নিয়ে সরকারের উদ্যোগগুলো এরই মধ্যে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত। মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখে, তেমনি সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে। একইসঙ্গে সুন্দরবন দেশের অর্থনীতি, প্রাণিবৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমানভাবে অবদান রাখছে। আমাদের ও দেশের স্বার্থেই এ বনকে টিকিয়ে রাখা আমাদের জরুরি। তাই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোক, আর যে কোনো উপায় হোক সুন্দরবনের ক্ষতি কাটিয়ে এটিকে রক্ষা করতে হবে। এ মুহূর্তে কার দোষ, কার গুণ খোঁজার আগে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা জরুরি। আগে সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে। উন্নয়নের নামে লোভের আগ্রাসন থেকে সুন্দরবন বাঁচার লড়াই করছে, সুন্দরবন মরলে আমাদেরও অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। বাঁচতে গেলে আমাদের বিশুদ্ধ পানি লাগবে, খাদ্য লাগবে, শ্বাস নেওয়ার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস লাগবে, আমাদের অস্তিত্বের জন্য বন লাগবে, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান লাগবে। তাই আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুন্দরবনকে বাঁচাই, নিজেরা বাঁচি। শফিকুল ইসলাম খোকন : কলাম লেখক