শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর

সুসম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক
নতুনধারা
  ০৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০

আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত। সম্প্রতি, বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর বলেছেন, 'বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিতে চাই, যে কোনো পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আর এ দুই দেশের মধ্যে উন্নয়নকে কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনা আছে। সেটা খুঁজে বের করতেই এ সফরে আসা।' আমরা মনে করি, এই বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক। দুই দেশের মধ্য সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় থাকবে এমনটি কাম্য।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সাক্ষাৎ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, 'প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যে কোনো সমস্যা সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।' এ ছাড়া টিকা সরবরাহসহ কোভিড-১৯ মহামারি সংকটে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোয় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবে দেশে যেন খাদ্যসংকট দেখা না দেয় সেজন্য কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকার খাদ্যোৎপাদনে জোর দিয়েছে।' অন্যদিকে দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে নিরাপত্তা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাণিজ্য, পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এই বিষয়গুলো ইতিবাচক। ফলে আলোচিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি হবে এমনটি কাম্য।

এছাড়া উলেস্নখ করা দরকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ তার দেশের জন্যও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন বাংলাদেশ তাদের কাছে শুধু একটি প্রতিবেশী নয়; বরং সারাবিশ্বের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। যেখানে দুই দেশে সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, শুধু আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সংকটের সমাধান করতে পারি- এমন দৃঢ়তা ব্যক্ত করেন। যা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, 'এটা অনেক বড় অর্জন। বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে একটা বিস্ময়কর উন্নয়ন।'

আমরা এটাও উলেস্নখ করতে চাই, দুই দেশের নিবিড় সম্পর্ক থাকার পরও সীমান্তে বাংলাদেশের লোকজনকে হত্যার বিষয়ে এস জয়শঙ্কর বলেছেন, 'আমরা একমত হয়েছি, প্রতিটি হত্যাকান্ডই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রশ্ন করেছি, সমস্যার মূল কারণ কী এবং এটি হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড। আমাদের দুই পক্ষের অভীষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধবিহীন সীমান্ত, যাতে সীমান্তে হত্যাকান্ড না হয়। আমার ধারণা, আমরা দুই পক্ষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারব।' আমরা মনে করি, এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী দিনে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজ কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে এমনটিও কাম্য। কেননা এটা মনে রাখা দরকার, সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। যদিও বলা দরকার, এর আগে বহু দেন-দরবার, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা এবং প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি, ফলে এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্টদের কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখা দরকার, নানাবিধ বিষয় আছে যেগুলোর অগ্রগতি জরুরি। সীমান্ত হত্যা বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতেও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে দুই দেশের সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে