দেশে করোনা সংক্রমণের এক বছর

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বই বিপর্যস্ত হয়েছে। এই মহামারিতে থমকে গেছে বিভিন্ন খাত। বিঘ্নিত হয়েছে মানুষের জীবন। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, দেশে মহামারি করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো ৮ মার্চ সোমবার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ করোনাবিষয়ক বুলেটিন অনুযায়ী রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মৃতু্য হয়েছে ৮ হাজার ৪৬২ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩ হাজার ৩ জন। উলেস্নখ্য যে, গত বছরের ৮ মার্চ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর। তখন তিনজন রোগী শনাক্তের কথা বলা হয়েছিল। তখনই মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছিল ভয়, আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি। প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের এক বছর পূর্ণ হলো, এই সময়ে এসে এটা বলা দরকার, বাংলাদেশ এই এক বছরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হওয়ার বিষয়টিও তিনি উলেস্নখ করেছেন। আমরা মনে করি, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকাটা অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। কেননা, এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেক শক্তিধর দেশও হিমশিম খাচ্ছে। টিকাদান কর্মসূচি চলছে বিশ্বজুড়ে, তবু করোনার সংক্রমণ ও মৃতু্য থেমে নেই। বরং এরই মধ্যে দ্রম্নত সংক্রমণে সক্ষম করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে 'করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়েরও' আশঙ্কা করেছেন দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। বলা দরকার, করোনা ভয়াবহতার ভেতর দেশে যেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া এটাও এড়ানো যাবে না যে, করোনাকালীন সময়ে অনেক অপ্রীতিকর এবং দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। করোনা টেস্ট ও সেবার নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের দুর্নীতি ছাড়াও সুরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে খোদ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার নাম শীর্ষে ওঠে এসেছে। তবে, মহামারি রুখতে এই দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের বদলিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ভূমিকাও দেখা গেছে। আমরা বলতে চাই, দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, করোনার সংক্রমণ ও সংক্রমণে মৃতু্য থেমে নেই। দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে। তবে এটা আমলে নিতে হবে যে, গত তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ আবার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক চিত্র আমলে নিয়ে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি কতটা এবং মানুষের সচেতনতার চিত্র আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। ভুলে যাওয়া যাবে না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অকারণে ঘোরাফেরা না করাসহ প্রয়োজনীয় সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতি জনজীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বেশি সংক্রমিত এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সব ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। জীবন জীবীকার প্রয়োজনে আবার তা শিথিল করা হয়। আমরা এটাও বলতে চাই, করোনা প্রতিরোধে টিকাদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বা করোনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিষয় অপরিহার্য। বাংলাদেশে টিকা চলে এসেছে এবং দ্রম্নতগতিতে টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে চলেছে- এই ইতিবাচক বিষয় আমলে নিয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।