স্বাধীনতার ৫০ বছর :প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি মাইন উদ্দীন হাসান
স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্ব-অর্থায়নে পদ্মা সেতু, প্রশস্তকরণসহ মহাসড়ক সংস্কার, মেট্রোরেল, ট্যানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক পস্ন্যান্ট, ওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার, অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন, রেল উন্নয়ন, নৌপথ উদ্ধার, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরানো রাস্তা সংস্কার, বিদু্যৎ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষমতা লাভ করলেও জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়নি সাধারণ জনগণের। পূরণ হয়নি মৌলিক অধিকারগুলো।
প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে এ দেশের মানুষ অনুভব করেছিল স্বাধীনতা অর্জনের। অবশেষে স্বাধীনতা অর্জিত হলো। সালটা তখন ১৯৭১! দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় ভূমি বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের দেখতে দেখতে ৫০ বছর পূর্ণ হতে চলছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা অর্জনকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা যেটুকু ছিল এবং তার সঙ্গে প্রাপ্তি কতখানি! স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণে হিসাব কষা যাক; আমাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমীকরণটা কতটুকু মিলাতে পেরেছি।
স্বাধীনতার সুফল শব্দটি বহুল প্রচলিত। এখন প্রশ্ন হলো, স্বাধীনতার সুফল বলতে আমরা কি বুঝি? কেন পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বাঙালি জাতি বেরিয়ে এলো? কেন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এত ত্যাগ-তিতিক্ষা, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হানি। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখতে হবে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তৎকালীন কেমন ছিল? পাকিস্তান রাষ্ট্র্র বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছিল না। তাদের মাঝে ছিল বৈষম্যমূলক আচরণ। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের মতামতকে কোনো তোয়াক্কা করা হতো না। ছিল না নিজস্ব স্বাধীনতা। সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রে অভাব ছিল নাগরিকের মৌলিক দাবি এবং অধিকারের। যার কারণে দীর্ঘ ২৪টা বছর তাদের শাসনে থাকার পর ওই রাষ্ট্র থেকে বের হয়ে আসার ইচ্ছা পোষণ করে বাংলার মানুষ। যে ইচ্ছাটা তারা দেখেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে সমবেত হয়ে। কারণ তারা অনুভব করেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানে যেসব মৌলিক অধিকারের অভাব ছিল সেগুলো পূরণ হবে। তখন পাকিস্তান ছিল সাম্প্রদায়িকতার ভেড়াজালে আবদ্ধ। তারা ধরে নিয়েছিল স্বাধীনতার ফলে বাংলাদেশ হবে অসাস্প্রদায়িকতার দেশ। তখন পাকিস্তানে রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল গণতন্ত্রহীন। তাই বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল সঠিক গণতন্ত্র চর্চার।
স্বাধীনতা মানে শুধু দেশকে দুষ্টচক্রের কবল থেকে ছিনিয়ে আনা নয়। স্বাধীনতা মানে দেশকে সব আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা। স্বাধীনভাবে মানুষের চলাফেরা এবং বাসযোগ্য করে তোলা। অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতন, সামম্প্রদায়িক চেতনা সব কিছুর পাহাড় ভেঙে একটি শান্তিসুখের দেশ গড়া। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদাপর্ণ করে তা কতটুকু সম্ভব হয়েছে? আমাদের দেশ যেন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। প্রতিদিন কলমের এক গুঁতোয় লুটপাট হয়ে যায় হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে দুর্নীতির এমন প্রত্যাশাতো ছিল না!
\হদেশের মানুষের মাঝে বর্তমান সময় দলে দলে কোন্দল লেগে থাকে, লেগে থাকে ধনী-গরিব শ্রেণি বৈষম্য। এতে ধূলিসাৎ হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনের একটি ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়া।
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণাপত্রের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি যেন আজও কেবল স্বপ্নেই থেকে গেছে। মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে। ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যায়ভাবে একে-অন্যের ওপর প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে অবিচার। স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ফুটপাতে মানুষ ঘুমায়। অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয় কত মানুষের! বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ তাজা প্রাণ দিয়েছে এসবের স্বপ্ন নিয়ে নয়। স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষ অনাহারে থাকবে না, থাকবে না কোনো মানুষ বাসস্থানহীন, মারা যাবে না বিনা চিকিৎসায় কেউ। এখানে এসে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরে এসেও কেন পারিনি আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি মিলাতে?
আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা হতে হবে। এতে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রয়েছে নিজস্ব স্বাধীন মত প্রকাশের। কিন্তু সেই মত প্রকাশেও তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও যদি স্বাধীন মত প্রকাশ করা না যায়, তাহলে স্বাধীনতা অর্জনের মহান স্বপ্নে বাধা তৈরি করার শামিল নয় কি?
আমরা স্বাধীনতা লাভের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছি। সহ্য করেছি অসহনীয় নির্যাতন। চেয়েছি রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, সামাজিক সুশাসন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এসবের স্বাদ আস্বাদনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙালি জাতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতার সুফল সবাই সমানভাবে পাননি। কুক্ষিগত থেকে গেছে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে। সুশাসন যেন সাধারণ জনগণের কাছে আজও স্বপ্ন। তাইতো স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও কবির বলতে হয় শাসনতন্ত্র কাটা ঘুড়ির মতো ভাসমান। যার মূল কারণ আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোতে বৈষম্য বিদ্যমান।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের সময় পৃথিবীর অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত দেশ ছিল। মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আজ তা নেমে এসেছে ২০ শতাংশের নিচে। যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। কিন্তু দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করলেও, থেকে গেছে প্রকট ধনবৈষম্য। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশের অগ্রগতি জানতে হলে, তাহলে বিশ্লেষণ প্রয়োজন ১৯৭১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে দেশের অবস্থান। যদিও ৫০ বছরের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সার্বিক বিশ্লেষণ করা জটিল। তবুও কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করা হলো। ১৯৭০ সালে স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল শুধু ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু ২০২০ সালে এসে অনুমিত জিডিপি ৮৬০.৯১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৭০-এ মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৪০ ডলার, ২০১৮-২০১৯-এ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৯০৯ ডলার এবং ২০২০-এ তা ২০৬৪-এ উন্নীত হয়। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি, ২০১৯-২০২০-এ ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি এবং ২০২০-২০২১ সালের বাজেট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে উন্নয়ন বাজেটের আকার ছিল ৫০১ কোটি টাকা- যা ২০২০-২১ সালে হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে গার্মেন্টস শিল্প। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে ষাটের দশকে। তবে সত্তরের দশকের শেষের দিকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। ২০১৯ সালেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। জেনেভায় এক সম্মেলনে একথা জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার- ডবিস্নউটিও। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রপ্তানি আয়ে এই শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ১.১ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে গার্মেন্টস শিল্প থেকে। সময়ের পরিক্রমায় গার্মেন্টস শিল্প সম্প্রসারণ হতে থাকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে গার্মেন্টেস শিল্প বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত।
প্রবাসীদের পাঠনো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলছে। ২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা- যা আগের বছরে ছিল ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের রেমিট্যান্স আসে প্রায় ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। যা বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয় প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্সকে। যা স্বাধানীতার ৫০ বছরে প্রত্যাশার শীর্ষে।
এত প্রবৃদ্ধিতে সম্ভব হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবে রূপদান! যার মাধ্যমে দেশ এগিয়ে গেল আরো এক ধাপ। একসময়ের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদ্মা সেতুর এই দৃশ্যমানতা দেশের অগ্রগতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে সূচনা করল নতুন অধ্যায়ের। ৬.১৫ কিলোমিটারের এই সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৪১তম শেষ স্প্যানটি বসানো হয় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। পদ্মা সেতুর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। উপকৃত হবে প্রায় ২১টি জেলার মানুষ। তৈরি হবে ভারি শিল্প কারখানা। এতে বাড়বে কর্মসংস্থান। যা অনেকের বেকারত্ব গুছাতে সাহায্য করবে।
মাথাপিছু আয়, বাজেট বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এসব অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিচায়ক হিসেবে কাজ করে। সরকার কাজ করে যাচ্ছে এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চ মর্যাদায় নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে দেশের সাধারণ জনগণ যেটুকু সুফল পাওয়ার কথা, তা তারা পায়নি। তবে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন স্বাধানীতার ৫০ বছরেও যে হয়নি, তা না। সড়ক ব্যবস্থা, বিদু্যতায়ন, নগরায়ন এসবে উন্নয়নের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। যেটা স্বাধীনতার ৫০ বছরে কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক। এত অগ্রগতির মধ্যে আর্থিক বৈষম্য প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কল্যাণে আমদানি নীতি উদার হয়েছে, ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে এবং আমদানি-রপ্তানির উদার নীতির ফলে পাচার হচ্ছে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ।
গার্মেন্টেস শিল্পের মতো পাটশিল্পও ছিল সমৃদ্ধির পথে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাঁচা পাট ও পাটজাতদ্রব্য মোট রপ্তানিতে ৫০% অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় পাটশিল্পের সমৃদ্ধির পথ। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পাটশিল্পের যখন বিশ্বে চাহিদা বাড়তে শুরু করল, তখন আমরা সেই শিল্পকে নিজ হাতে কবর দিয়েছি। একসময় পাট দেশের অর্থকরী ফসল ছিল। শুধু তাই নয়, দেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগ আসতো পাটশিল্প থেকে। কিন্তু এই শিল্প রক্ষায় সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে, পাটশিল্প প্রায় ধ্বংসের পথে। যা স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অদক্ষতার পরিচয় বহন করে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কতটুকু! দেশের শিক্ষার হার বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঝরে পড়ার হার রোধ করা হয়েছে। বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার হার বেড়েছে। জাতীয় জীবনের সর্বত্র নেতৃত্বদানের উপযোগী, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল, মানবমুখী, সুনাগরিক তৈরি করাই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বমানের শিক্ষার লক্ষ্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, ছাত্র-শিক্ষকের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতিতে নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার আসল লক্ষ্য। ফলে সেশন জট থেকে শুরু করে সৃষ্টি হচ্ছে নানা অনিয়মের। যেটার প্রভাব পড়ছে মানসম্মত শিক্ষা দানে। শিক্ষা সম্পর্কিত অঙ্গীকার পূরণে সরকার বদ্ধপরিকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা কর্মযজ্ঞ চলমান থাকার পরও, মানসম্মত শিক্ষার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেটা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ পূরণে ব্যর্থ। যার কারণে বিশ্বর্ যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিতে পারছে না দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। স্বল্পতা রয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেটের। মূলত বাজটের ওপরে নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মত, বিজ্ঞানধর্মী, গবষণালব্ধ শিক্ষা প্রদান। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যর্থতায় বেড়ে চলেছে বেকারত্বের হার। বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬-২৭ লাখ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে যেটি দেশের জন্য অভিশাপ স্বরূপ।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্ব-অর্থায়নে পদ্মা সেতু, প্রশস্তকরণসহ মহাসড়ক সংস্কার, মেট্রোরেল, ট্যানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক পস্ন্যান্ট, ওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার, অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন, রেল উন্নয়ন, নৌপথ উদ্ধার, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরানো রাস্তা সংস্কার, বিদু্যৎ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষমতা লাভ করলেও জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়নি সাধারণ জনগণের। পূরণ হয়নি মৌলিক অধিকারগুলো।
\হসাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হোক সুশাসন, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা। যাতে সাধারণ নাগরিক মাথা উঁচু করে বলতে পারে স্বাধীনতা অর্জনের মৌলিক প্রত্যাশা পূরণে আমাদের বিসর্জন যেন অব্যর্থ।
মাইন উদ্দীন হাসান : কলাম লেখক