বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা

কার্যকর পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবী এখন ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি। আর দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সঙ্গত কারণেই এমন প্রেক্ষাপটে দেশের স্বাস্থ্য খাতের পরিস্থিতি আমলে নেওয়া কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও জনসমাগম এড়িয়ে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফলে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতু্যর সংখ্যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ-সাধারণ বেড, সহায়ক জনবল ও সেবা সরঞ্জাম ঘাটতিতে গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না। ফলে এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হলেও বাধাহীন দ্বিতীয় ঢেউয়ে স্বাস্থ্য খাত টালমাটাল বলেও জানা যাচ্ছে।

আমরা মনে করি, যদি স্বাস্থ্য খাতে বেহাল দশা সৃষ্টি হয় তবে তা করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক। সঙ্গত কারণেই যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমলে নিতে হবে, বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করছেন, প্রতিনিয়ত নানাভাবেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। সড়ক, অলিগলি, পাড়া-মহলস্নার দোকানপাট, কাঁচাবাজারগুলোতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর সেখানে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, লকডাউনের প্রথম দিনই ৫২ জনের মৃতু্য, ৭ হাজার ৭৫ জন শনাক্ত এবং দ্বিতীয় দিনে তা বেড়ে ৬৬ মৃতু্য ও ৭ হাজার ২১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর তৃতীয় দিনে শনাক্তের সংখ্যা ৭৬২৬, মৃতু্য ৬৩ জনে দাঁড়ায়।

আমরা বলতে চাই, যখন জানা যাচ্ছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন ঘাটতিতে আক্রান্ত ও শনাক্ত বাড়ছে- তখন বিষয়টি আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে- এই বিষয়টি কতটা ভীতিপ্রদ তা আমলে নিয়ে, ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ-সাধারণ বেড, সহায়ক জনবল ও সেবা সরঞ্জাম ঘাটতিতে গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না- এই বিষয়গুলোর সমাধানে কাজ করতে হবে।

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর লকডাউন বা সাধারণ ছুটির ব্যাপারে কড়াকড়ি থাকলেও এবার শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। প্রথম সংক্রমণের শুরুতে সাধারণ মানুষ সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার মনোযোগী হলেও এবার তা করছে না। সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার নির্দেশনা দিলেও বাস্তবায়ন করাতে পারছে না। মূলত দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় যথাসময়ে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।

সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন ও একই সঙ্গে প্রতিটি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপন এবং উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দেশনার প্রায় এক বছর পার হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া যে কোনো সময় ভাইরাসটির পিক পর্যায় বা দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শীতে সেকেন্ড ওয়েভ না হওয়ায় বাধা কেটে গেছে মনে করে সংশ্লিষ্টরা উদাসীনতা দেখিয়ে আসছেন- এর আগে এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

সর্বোপরি বলতে চাই, স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া দেশে এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে, এ সময়টাকে সামনে রেখে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। করোনার এই ভয়াবহ সময়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের মতামতগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করাসহ সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে