শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

মানহীন ওষুধের হিড়িক চিকিৎসাব্যবস্থা হুমকির মুখে

নতুনধারা
  ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ সময়ের সঙ্গে। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও উন্নতি চোখে পড়ার মতো। এক সময় ভালো ডাক্তারের চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগী ভিনদেশে যেত চিকিৎসা করাতে আবার কেউ কেউ ভালো চিকিৎসার অভাবে অকালে হারাতো প্রাণ। তবে এখন ভিনদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর সংখ্যা কম হলেও মানহীন চিকিৎসার দরুন সুস্থতা পাচ্ছে না রোগী। বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রায় ৬৫টা। প্রতি বছর এই মেডিকেল কলেজগুলো থেকে পাস করে বের হওয়া ডাক্তারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রায় ৭০০০। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজের গজঈচ পরীক্ষায় বাংলাদেশি ডাক্তার মাহমুদুল হক সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে মনোনীত হয়েছেন। এতকিছুর পরও আমরা পিছিয়ে আছি চিকিৎসায়। ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে অগণিত রোগীদের। ভুল চিকিৎসা কিংবা মানহীন চিকিৎসার জন্য অবশ্য আমরাই দায়ী। আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনি। যেমন কোথাও ডাক্তার দেখানোর জন্য গেলেই একদল লোক অপেক্ষায় থাকে কখন রোগীটি প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হবে আর তারা ছবি তুলে নেবে। এরা হলো বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয়কর্মী। এরা তদারকি করে ডাক্তার তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন কিনা! যদি না লেখেন তখন আবার ডাক্তারকে তারা চাপ দেন। দেশে যেসব ওষুধ কারখানা আছে তার সবগুলোর কোনোটা বিদেশি মালিকানাধীন আবার কোনোটা দেশীয় শিল্পপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। কিছু ওষুধ কোম্পানি আছে যেগুলোর ওষুধের মান চিকিৎসা উপযোগী নয়। তারপরও চাপের মুখে পরে ডাক্তাররা এসব মানহীন ওষুধ খেতে বলছেন রোগীদের। কারণ তারাও তো নিরুপায়। করোনাকালীন সময়ে এদের সংখ্যাটা না কমে বরং বেড়েছে। সম্প্রতি ঢাকার শাহবাগে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের সামনে চোখে পড়ে এক করুণ দৃশ্য। এক বৃদ্ধা তার বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে হাসপাতালের গেট থেকে বের হওয়া মাত্রই তাদের ঘিরে ধরেন ১৫-১৬ জন লোক। তারা প্রত্যেকে মোবাইল ফোন বের করে ছবি তুলছিলেন প্রেসক্রিপশনের। এমন অবস্থায় বৃদ্ধ পড়ে যান মাটিতে। যারা ছবি তুলছিলেন তাদের প্রত্যেকের বয়সই ৪০-এর কম। এদের জন্যই মূলত মানহীন চিকিৎসা পেতে হচ্ছে আমাদের। তাছাড়া বর্তমানে আরেকটা বিষয় চোখে পড়ার মতো। এত এত গুণী ডাক্তার থেকেও পিছিয়ে পড়ছি আমরা। পাচ্ছি না সঠিক চিকিৎসা। ক্ষমতার চাপে পরে ডাক্তাররা বাধ্য হচ্ছেন এমন ওষুধ লিখতে। মানহীন ওষুধ সেবনে একেতে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে ওই ডাক্তারকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে মানুষের মনে। বড় বড় ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের শিক্ষার মান নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। প্রতিটি হাসপাতাল, ডাক্তারের চেম্বারে এত এত রিপ্রেজেন্টেটিভ তবুও এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই, নেই কোনো বিধি-নিষেধ। এর সঙ্গে সমানতালে চলছে সিরিয়াল বাণিজ্য। ডাক্তার দেখানোর জন্য অনেক আগে সিরিয়াল দিয়েও সিরিয়াল বাণিজ্যের কাছে হেরে গিয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ সমস্যার মুখে পড়তে হয় বৃদ্ধ বয়সি এবং গর্ভবতীদের। তারা দূর-দূরান্ত থেকে এসেও তাদের সিরিয়াল অনুযায়ী ডাক্তার দেখাতে পারেন না। চিকিৎসার নাম করে সিরিয়াল বাণিজ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত হচ্ছি আমরা। এমন অবস্থায় চিন্তার দোলনায় দুলছে দেশবাসী, বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা। তারা না পারছে দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে না পারছে দেশের মানহীন চিকিৎসা গ্রহণ করতে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এবং সঠিক চিকিৎসা বাস্তবায়ন করতে আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যেমন- কোনো রিপ্রেজেন্টেটিভকে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে দেওয়া যাবে না। সরকারের উচিত ওষুধের মানগুলো আবার পর্যবেক্ষণ করা, মোবাইলো কোর্ট বসানো উচিত যেন রিপ্রেজেনটিভরা ভিড় জমাতে না পারে হাসপাতাল কিংবা চেম্বারের আশপাশে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এবং সঠিক চিকিৎসা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা সরকার ও ডাক্তারের দায়িত্ব। আশা করি প্রশাসনের নজরে আসবে বিষয়টি এবং তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিশাল সাহা

শিক্ষার্থী

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে