মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

কোভিড সময়ে হাসপাতালে বাড়ছে দুর্ভোগ

নতুনধারা
  ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সঙ্গে বাড়ছে মৃতু্যর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং মৃতু্য হয় এবছরের ৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার)। দেখা যাচ্ছে প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের বেশির ভাগেরই প্রয়োজন হচ্ছে হাসপাতাল সাপোর্ট। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পাচ্ছে কোথায়?

খবরের কাগজ কিংবা টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে এক শ্রেণির মানুষের নীরব হাহাকার। অবাক দৃষ্টিতে প্রিয়জনকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত ভরে যেন হাঁপিয়ে উঠছে কিন্তু তারা ক্লান্ত হয়ে নয়, মানুষ দৌড়ঝাঁপ করেও যখন প্রিয়জনের জন্য স্বস্তির ব্যবস্থা করতে পারছে না, এর চেয়ে কষ্টের কী হতে পারে? কিছুদিন আগেই পত্রিকায় চোখ দিতেই একটি খবর খুব আঘাত করল। সন্তান তার মাথার উপরের ছায়াটিকে টিকিয়ে রাখতে নানা হাসপাতাল ঘুরেও পায়নি কোথাও স্থান। অবশেষে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই সন্তান হারিয়ে ফেলল তার ভুবন। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে? প্রতিনিয়ত মানুষ এমন কত অসহায়ত্ব নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। শুধু একটু প্রিয়জনের কষ্ট নিবারণ, তাদের সুস্থতাই একমাত্র লক্ষ্য।

অন্যদিকে কোভিড পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাওয়ায় নন-কোভিড পেশেন্ট বা রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। তাদের শরীরের রেগুলার চেকাপ থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একজন কিডনিজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে এলে, হচ্ছে না কোনো সুরাহা। কিডনিজনিত সমস্যায় প্রয়োজনে ডায়ালাইসিস করার সুবিধা নিতে পারছে না অনেক পরিবার। একজন অসুস্থ রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেলে তার পরিণতি স্বভাবতই খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাবে কিন্তু এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়। অসহায়ত্ব নিয়ে পরিবারগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রবেশ করলে দেখা যায় মানুষের অসম্ভব অসহায়ত্বের কথা। কে শুনবে? কে দেখবে তাদের এই দুরবস্থা? কাদের কাছে প্রকাশ করলে মিলবে সমাধান, মানুষের ঠিক জানা নেই। তাই আবেগ-অনুভূতিগুলো যেন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে নিজেদের কিছুটা হালকা করছে।

অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ শতাংশের নিচে থেকেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না হওয়ায় অনেকেই অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে মৃতু্যর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাছাড়া কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মানুষ কোভিড পরীক্ষা করতে এলে তাতেও হচ্ছে চরম ভোগান্তি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও মানুষকে পরীক্ষা না করেই ফিরে যেতে হচ্ছে বাসায়। আবার কেউ পরীক্ষা করার সুযোগ পেলেও কোভিড পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ এটা জানার জন্য করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা।

এদিকে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে শিশুদের বাড়ছে নানা ঠান্ডাজনিত রোগ। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। ভর্তির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও অনেকেই পরামর্শ নিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে মানুষের যেন ভোগান্তির শেষ নেই। কোভিড পরিস্থিতি যতই দিন গড়াচ্ছে খারাপ থেকে খারাপের দিকেই ইঙ্গিত করছে। এর শিকার হচ্ছে কোভিড এবং নন কোভিড রোগীরা। এই ভোগান্তির নিরসন খুব দ্রম্নত করা জরুরি, নয়তো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা কিংবা হাসপাতাল বা ডাক্তারের পরামর্শের অভাবে নতুন মৃতু্যর সংখ্যা দেখতে আমাদের তৈরি থাকতে হবে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেখেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একপ্রকার লুকোচুরি করে মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে, সঙ্গে থাকছে নানা অজুহাত। লকডাউন দিয়েও মানুষকে আটকে রাখা যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে হার্ডলাইন এবং নিয়মের মধ্যে না এলে বাংলাদেশকেও বিশ্বের মতো আক্রান্ত ও মৃতু্যর মিছিলে প্রথম সারিতে দেখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সচেতনার বিকল্প কিছু এই মুহূূর্তে নেই।

কাব্য সাহা

ফার্মেসি বিভাগ

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে