সাগরকন্যা পটুয়াখালী সম্ভাবনার স্বর্ণালি অধ্যায়

ফটোগ্যালারিতে জাতীয় দিবসসহ বিশেষ দিবসগুলোতে জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মেলবন্ধ ফুটে উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনদের পটুয়াখালীর মাটিতে আগমনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো আরও স্মরণীয় হয়ে উঠেছে।

প্রকাশ | ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

সেলিনা আকতার
''আমরা পটুয়াখালীতে তো অনেক কিছু করে দিয়েছি। পটুয়াখালী আর খালি নেই। এখন ভরাট হয়ে গেছে, পটুয়াখালী এখন ভরপুর।'' পটুয়াখালী জেলা সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে নিঃসৃত এমন মমতাপূর্ণ, প্রত্যয়দীপ্ত, সম্ভাবনাময় উক্তিই বিশ্ব দরবারে পটুয়াখালীকে করেছেন ব্র্যান্ডেড পটুয়াখালী। এরপর পটুয়াখালীর ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে অন্য কোনো উপমা, অন্য কোনো প্রচেষ্টা নিছক অর্থহীন প্রয়াস মাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট পটুয়াখালী আজ সম্ভাবনাময় পটুয়াখালী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পটুয়াখালীবাসী আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন 'সোনার বাংলা' গড়ার অভিষ্ট লক্ষ্যে অবিরাম ছুটে চলা বাংলাদেশ আজ বহির্বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সুপরিচিত। পিতার স্বপ্নকে পূরণ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আর এ প্রত্যয় অর্জনের জন্য প্রতিটি জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রেখে এটির নিজস্বতাকে আপন মহিমায় বিকশিত করার জন্য জেলা ব্র্যান্ডিং একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং দূরদর্শিতার দাবিদার। জেলা ব্র্যান্ডিং এ মহতী উদ্যোগকে আরও বিকশিত ও আক্ষরিক রূপ দেয়ার জন্য পটুয়াখালী জেলার শিল্প, সংস্কৃতি অর্থনীতি ও দর্শনীয় স্থানসমূহ বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে জেলা প্রশাসন, পটুয়াখালী প্রকাশ করেছে জেলা ব্র্যান্ডবুকের দ্বিতীয় সংস্করণ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই ৬৪টি ব্রান্ডবুক প্রকাশিত হয়েছে, এটি বর্তমানে একটি রুটিন ওয়ার্ক। সরকারি দায়িত্ব, নির্দেশনা পালনের সঙ্গে যখন একটি জনপদের প্রতি, ওই জনপদের মানুষের প্রতি আন্তরিকতা, মমত্ববোধ আর ভালোবাসা মিশে যায় তখন কাজটি শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়; হয় অনন্য। এই অনন্যতা মানুষ বুঝতে পারে, নীরবে অনুভব করতে পারে কাজের স্বাক্ষর আর ফলাফলের দিকে তাকালে। তাইতো ''কুয়াকাটা অনন্যা, পটুয়াখালী সাগরকন্যা'' শিরোনামে পটুয়াখালী জেলা ব্র্যান্ডবুকটি হাতে নিতেই মুহূর্তেই মনে পড়ে গেল বিখ্যাত সেই বাক্যটি- ্তুখড়াব ধঃ ভরৎংঃ ংরমযঃ্থ. আকর্ষণীয় ও পরিপাটি প্রচ্ছদের উপরের অংশটিতে শুভ্রতার পবিত্রতা বিরাজমান- যা নিমেষেই মনকে করে প্রশান্ত। সেই শুভ্রতার মাঝে পরশ পাথরের হাসিমাখা তেজোদীপ্ত জাতির পিতার মুখায়ব সংবলিত জন্ম শতবর্ষের লোগোটি শুভ্রতার দু্যতি ছড়াচ্ছে। পাশে পটুয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিং লোগোটি প্রচ্ছদটিকে করেছে আরও দৃষ্টি নন্দন। সেই সঙ্গে আবহমান কাল ধরে গঙ্গামতির চরে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ, বর্তমান ঐতিহ্য পায়রাপোর্ট, বিশ্বে পর্যটন শিল্পে বিরল বৈশিষ্ট্য (একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন) সূর্য সৈকতের মিতালি এবং নিচের দিকে বেলাভূমিতে আচড়ে পড়া টেউয়ের নৈসর্গিক দৃশ্যের ছবি পাঠককে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মোহাচ্ছন্ন করে, মনকে নিয়ে যায় সৈকতের বেলাভূমিতে। ভাবুক মন আর সৌন্দর্য পিপাসু চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে প্রচ্ছদটি হয়ে উঠেছে অনন্য অসাধারণ। পরম করুণাময় কুয়াকাটাকে সাজিয়েছেন তার অপার কৃপায়। প্রকৃতি যেন এখানে রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এ অনিন্দ্য সৌন্দর্য কুয়াকাটাকে করেছে অনন্যা। সাগর মাতার কোলে ছোট্ট শান্ত ফুটফুটে স্নিগ্ধ সাগরকন্যা পটুয়াখালী জেলা। দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুরা মনের অপার ক্ষুধা মেটাতে প্রতিনিয়ত ছুটে চলছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে। আর একবার এ সৌন্দর্য উপভোগ করলে এ মোহাচ্ছন্নতা তাকে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে। কুয়াকাটাকে ঘিরে পটুয়াখালীর পর্যটন শিল্প আজ সম্ভাবনার স্বপ্নচূড়ায় বিচরণ করছে। তাইতো ব্র্যান্ডবুকের নাম ''কুয়াকাটা অনন্যা, পটুয়াখালী সাগরকন্যা'' যথার্থ ও পরিপূর্ণ হয়েছে। ''পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় পটুয়াখালী জেলা যে কোনো পর্যটকের জন্য স্বপ্নের গন্তব্য''- বইটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী পটুয়াখালী জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরীর বাণীতে দেয়া উপরোক্ত বাক্যটির মধ্য দিয়েই পটুয়াখালী জেলার পরিচ্ছন্ন, পরিপূর্ণ এবং যথার্থ ব্র্যান্ডিং সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বইটি প্রকাশে প্রতিটি পাতায় তার রয়েছে আন্তরিকতার ছোঁয়া। বইটি খুলতেই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে জাতির পিতাকে স্মরি, পিতার মুখায়বে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে অতঃপর পাতা উল্টাতেই দেহ-মন-প্রাণ জুড়ে শিহরণ জাগিয়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর অপার ভালোবাসার সেই চির অক্ষয়, অম্স্নান দেশপ্রেমের চেতনা জাগরণী উক্তি- ''একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে''। এরপর রয়েছে সমগ্র বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়দীপ্ত একটি ছবি। বইটিতে লিপিবদ্ধ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয়ী উক্তিটির মাঝে আমরা পাই 'সোনার বাংলা' গড়ার অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে নিজেকে নিয়োজিত রাখার সম্মোহনী শক্তি। বইটিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন সম্মানিত কর্মকর্তাদের দেয়া বাণীতে জেলা ব্র্যান্ডিং এবং ব্র্যান্ড বুকের যথাথতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। দ্বিতীয় সংস্করণে বইটির কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকখানি। ঝকঝকে গেস্নাসি পেপারের সংযোজন বইটির গুণগত মান বাড়িয়ে বইটিকে বারবার উল্টেপাল্টে পড়ার সাধ জাগায়। পটুয়াখালীর খুঁটিনাটি সব বিষয়গুলো চৌম্বক দৃষ্টিতে খুঁজে বের করে পরম যত্নে বইটিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংক্ষিপ্তসারে তথ্যবহুল উপস্থাপনায় পটুয়াখালী জেলার উৎপত্তিগত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এতে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ইতিহাস। জেলা প্রশাসন একটি জেলার দর্পণ স্বরূপ। আর সেই দর্পণকে পাঠকের সামনে একদম স্বচ্ছ ঝকঝকে করে তুলে ধরার জন্য বইটি হয়েছে তথ্য ভান্ডার স্বরূপ। জেলা ব্র্যান্ডবুকে মুক্তিযুদ্ধে পটুয়াখালী জেলার সূর্য সন্তানদের (জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান) বীরত্বগাঁথা, বদ্ধভূমির কথা তুলে ধরা হয়েছে। যা পড়তে গিয়ে আমার বুকটা গর্বে ভরে উঠে আর মনের অজান্তেই ডান হাতটি কপালের ডান পাশটা স্পর্শ করে আর মুখে সগর্বে উচ্চারিত হয়- ''স্যালুট! হে আমার আত্মত্যাগী ভাইয়েরা, \হতোমাদের কাছে চিরঋণী আমরা।'' সাগরকন্যা পটুয়াখালী জেলার পর্যটন শিল্পের টার্নিং পয়েন্ট অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কুয়াকাটার মসৃন তপ্ত বালুকাময় তটে রুপালি ঢেউয়ের আচড়ে পড়া আর সাগরের সঙ্গে সূর্যের উদয়-অস্তের মিতালির মোহাচ্ছন্ন দৃশ্য, প্রাচীন ঐতিহাসিক কুয়া, ক্র্যাব আইল্যান্ড, গঙ্গামতির চর, ফাতরার বন, শুঁটকি পলস্নী, শ্রী মঙ্গলের বৌদ্ধবিহার, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন পলস্নী, প্রাচীন কাঠের নৌকাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহের ঝকঝকে আলোকচিত্রসহ তথ্যবহুল উপস্থাপন পটুয়াখালীর ব্র্যান্ডিংয়ে পর্যটন শিল্প খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। পর্যটকদের সহজভাবে নিশ্চিন্তে বিচরণের জন্য বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন হোটেল-মোটেলের সার্বিক তথ্য ও সেবাসমূহ। পটুয়াখালীর চিরাচরিত সৌন্দর্যে নতুন যোগ দেয়া পায়রাপোর্ট আর তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র পটুয়াখালীর অর্থনৈতিক কাঠামোকে গেস্নাবাল অর্থনীতিতে দিয়েছে অনন্যমাত্রা। অবকাঠামোগত উন্নয়নে নতুন সংযোগ শেখ হাসিনা সেনানিবাস, কোস্ট গার্ড, শেখ রাসেল পার্ক, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল সেতু যোগাযোগে এনে দিয়েছে সড়কে উড়ে বেড়ানোর স্বাদ। সেই সঙ্গে যোগ হচ্ছে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু। ব্র্যান্ডবুকে স্বাদে, বর্ণে, গন্ধে তুলনাহীনা পায়রার রুপালি ইলিশের লোভনীয় ছবিগুলো নিঃসন্দেহে যে কোনো ভোজন রসিকের জিভে জল এনে দেবে। ছবিতে এ জেলার মাটিতে তরমুজের বাম্পার ফলন আর এর মন কাড়া রং তরমুজ তৃষ্ণার্ত করে তুলবে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তের মানুষকে। উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান মেগাপ্রজেক্টগুলোর তথ্যবহুল উপস্থাপন পাঠকের মনের হৃদয়াকাশে স্বপ্নের ফানুস উড়াবে, সোনালি দিনের সোনার ফসল বোনার স্বপ্নে বিভোর হবে। ব্র্যান্ডবুকে পটুয়াখালীর সোনার প্রান্তরে সোনালি ধানের অপরূপ দৃশ্যের ছবি দেখে বারবার মনের কোনে বেজে উঠে সেই গানটি- 'ধান নদী খাল চোরাবালি, বানাইছি ঘর সবাই মিলি, সাগরকন্যা জেলা পউট্টাখালী।' বাউফল উপজেলার মৃৎশিল্পের দৃষ্টি নন্দন বিলাস সামগ্রীর বৈদেশিক বাজারে চাহিদার তথ্যমূলক উপস্থাপন এবং স্থিরচিত্রে সুনিপুণ নির্মাণ শৈলীর নান্দনিক দৃশ্য পটুয়াখালীর ব্র্যান্ডিং প্রসারতাকে করবে আরও সমৃদ্ধ। ইতিহাস-ঐতিহ্যে ব্র্যান্ডবুকে স্বীয় তেজোদীপ্ততায় আলোকিত স্থান অধিকার করে নিয়েছেন বাংলার বাঘখ্যাত শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের পূর্ব পুরুষের ভিটা। ব্র্যান্ডবুকে তুলে ধরা রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচর পর্যটন শিল্পে এনে দিয়েছে সম্ভাবনার আর একটি মাইলফলক। রয়েছে দক্ষিণ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস আর নির্ভরতার ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজার গড়ে উঠার ইতিহাস। প্রাচীন ঐতিহ্যে বর্ণিত হয়েছে কালীবাড়ি মন্দির এবং মিয়াবাড়ী মসজিদ। আমি সত্যিই অবাক হলাম যখন পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখে পড়ল 'সিঙ্গারা পয়েন্ট' নামটি। তরুণ প্রজন্মের রোমাঞ্চকর আর বিশেষ আকর্ষণের একটি স্থান হলো পটুয়াখালী 'সিঙ্গারা পয়েন্ট'। বোম্বাই মরিচের ঝাল ঝাল সিঙ্গরা মুখে পুরে চায়ের কাপে ঝড় তুলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। এর মধ্যে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাই বেশি। শহরের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ-সংসার, প্রেম কাহিনী হলো আলোচনার পিক পয়েন্ট। কাজের সুবাদে দেশে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করলেও শহরে এলে একবার হলেও ছুটে যায় তারা সিঙ্গারা পয়েন্টে। এ যেন নাড়ির টান! ওখানে অনেক যুবকরা খুঁজে পায় তাদের কৈশর আর তারুণ্যের স্মৃতি। মিস করে সিঙ্গারা বিক্রেতা অমল দা'র মায়াবী হাসি। বাদ পড়েনি দক্ষিণ বঙ্গের প্রথম এবং একমাত্র সাপের খামারটির কথা। শিক্ষা বিস্তারে এ জনপদটি সুপ্রাচীন থেকেই অগ্রগণ্য। পটুয়াখালীর মেধাবী সন্তানরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কর্মরত আছেন। আর তাদের তৈরি করতে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের পরিচিতি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ব্র্যান্ডবুকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে জেলা প্রশাসনের এক প্রশংসনীয়, নান্দনিক এবং আইকনিক স্থাপনা 'বঙ্গবন্ধু তোরণ' যাতে টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৫২ থেকে '৭১ পর্যন্ত ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের ঘটনাসমূহ। ব্যতিক্রমধর্মী এই তোরণ বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করিয়ে দেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। বঙ্গবন্ধুর স্মরণে জেলা প্রশাসনের মহৎ উদ্যোগে 'বজ্রকণ্ঠ' নামক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সংকলন, বঙ্গবন্ধু তোরণ নির্মাণ, ১০ লাখ বৃক্ষের চারা রোপণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের তথ্য ও ছবিসহ মনকাড়া উপস্থাপন ব্র্যান্ডবুকটিকে করেছে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনে মহিয়ান। যা পটুয়াখালীবাসীকে চিরকৃতজ্ঞতার বন্ধনে করেছে আবদ্ধ। ফটোগ্যালারিতে জাতীয় দিবসসহ বিশেষ দিবসগুলোতে জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মেলবন্ধ ফুটে উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনদের পটুয়াখালীর মাটিতে আগমনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো আরও স্মরণীয় হয়ে উঠেছে। এত কিছুর মাঝেও পাঠক হিসেবে আমার বুভুক্ষ মনের একটু ক্ষুধা রয়েই গেল। পটুয়াখালীর আবহমানকালের ঐতিহ্য বহনকারী একান্ত নিজস্ব কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের (উৎসবে হয়না পরিবেশন, নববর্ষে ঘোড়দৌড়, থৌল, হালখাতা, নতুন জামাই বউ বরণে পিঠা পার্বণ, জারি গান, হাঁটুরে গান, ভাষাণ গান, জামাই বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ির বড়া পিঠা আপ্যায়ন, বরের আগমনে দেউড়া ধরা উৎসব) বর্ণনা কোথায়ও খুজেঁ পেলাম না। চোখে পরেনি পটুয়াখালীকে নিয়ে লেখা এই জনপদের মানুষগুলোর পরম মমতায় লেখা কোনো গান ও কবিতার কথা। বাদ পড়ে গেল জেলার সবচেয়ে পুরানো (১৯৬৩-৬৪ সাল) ঐতিহ্যবাহী শহীদ মিনারটির কথা। যা সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের দক্ষিণপ্রান্তে মসজিদের পাশে। প্রকৃত পক্ষে এখানেই বইটির সার্থকতা। কেননা, লেখক কেবল পাঠকের মনে ক্ষুধা জাগায়, আস্তে আস্তে সেই ক্ষুধা তীব্র করে, আবার একসময় কিছু ক্ষুধা রেখেই পরিসমাপ্তি ঘটায়। আর থেকে যাওয়া এই কিছু ক্ষুধাই পাঠককে রাখে পরবর্তী সংস্করণের অপেক্ষায়। সীমাহীন কৃতজ্ঞতা এটুআই প্রোগ্রাম ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যাদের দিকনির্দেশনায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা ব্র্যান্ডবুক প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা পটুয়াখালীর সুখ দুঃখের সারথি উপদেষ্টা ড. অমিতাভ সরকারের প্রতি। সম্পাদক এবং সম্পাদনা পর্ষদের আন্তরিকতা এবং সুনিপুণতা বইটিকে করেছে পূর্ণতার প্রাপ্তিতে আলিঙ্গন। আলোকচিত্রকারের দক্ষতা বইটিকে করেছে আলোকময়। মুদ্রণে বরাবরের মতো মাস্টার গ্রাফিক্স অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার ছাপ রেখে গেছে বইটির সমস্ত অবয়ব জুড়ে। পরিশেষে পটুয়াখালীর আলো-বাতাস, প্রতিটি ধূলিকণার সফঙ্গ রয়েছে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। রয়েছে নাড়ির অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। নিজের অস্তিত্বকে জানতে হবে। অজানাকে ভালোবাসা যায় না। কোনো কিছুকে ভালোবাসতে হলে তাকে জানতে হয়, অনুভূতি দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। মনোকাশে তার ছবি ঘুরে ফিরে আসতে হয়। হৃদয় ক্যানভাসে রং তুলিতে ছবি আঁকতে হয়। কিন্তু কল্পনার রং হয় ক্ষণস্থায়ী। স্থায়ী আঁচড় কাটে কেবল চিরচেনা দৃশ্যাবলি। গুণগত মানসম্পন্ন, আকর্ষণীয় ও তথ্যবহুল এই জেলা ব্র্যান্ডবুকটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে পটুয়াখালীর ব্র্যান্ডিংকে করবে ইনশাআলস্নাহ আরও আবেদনময়ী ও সমাদৃত, এ আমার অটুট বিশ্বাস। সেলিনা আকতার : সহকারী অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ