বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিসিবির পণ্য ক্রয়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

যথাযথ পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। দেশেও থেমে নেই সংক্রমণ ও সংক্রমণে মৃতু্য। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। কেননা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। বলা দরকার, একদিকে করোনার ভয়াল থাবা, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি- আর এই পরিস্থিতিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকসেলের পণ্য এখন অনেকেরই ভরসা। কিন্তু পণ্য কিনতে আসা লোকজনের মধ্যে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নির্ধারণে চিহ্ন থাকলেও কেউ তা মানছেন না। বেশির ভাগ মানুষই নিয়ম উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে মুখে মাস্ক পরলেও অন্যদের কারও থুতনিতে, কারও গলায় তা ঝুঁলছে। আবার অনেকে পকেটে কিংবা হাতে মাস্ক ধরে রেখেছেন- এমনটি প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যদি স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয় তবে তা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, আগে শুধু নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষকে টিসিবির পণ্য কেনার লাইনে দেখা গেলেও, এখন নিম্নবিত্ত; এমনকি মধ্যবিত্তদেরও দেখা যাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। তারা পণ্য কেনার সারিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সংগ্রহ করছেন কাঙ্ক্ষিত পণ্য। ঢাকাসহ সারা দেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পণ্য কিনতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ। প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, টিসিবির ডিলাররা বলছেন, গত বছর করোনা শুরুর পর বাজারে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়লেও সে সময় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাকসেলে হুমড়ি খেয়ে পড়েনি। অথচ এবার লকডাউন শুরুর পর থেকেই ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আগের তুলনায় ভিড় এতটা বেড়েছে, দুপুর গড়ানোর আগেই তাদের কাছে থাকা চিনি-তেলসহ সব পণ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা ও উপস্থিতির তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্য দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডিলাররা।

আমরা বলতে চাই, করোনার প্রভাব ভয়ানকভাবে পড়েছে। এমনটিও আলোচনায় এসেছে, রিকশাচালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমজীবী মানুষ তাদের কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে দিয়ে সংসার চালাতে পারলেও বেসরকারি চাকরিজীবী ও দোকানিসহ যারা মধ্যমআয়ের মানুষের সামনে বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। তাই বাধ্য হয়ে সংকোচ কাটিয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে বিভিন্ন সড়কে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। সঙ্গত কারণেই জীবনযাপন নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন এটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে- এই বিষয়টিকেও এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আমরা বলতে চাই, টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যেন মানুষ মানে সেই বিষয়টি সামনে রেখে উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে ট্রাকসেলের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া এমন অভিযোগও এসেছে, টিসিবি থেকে ডিলারদের যে পরিমাণ পণ্য দেওয়া হচ্ছে তার সবটুকু লাইনে দাঁড়ানো মানুষের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে না। ডিলাররা অনেকে গোপনে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তারা তাদের খেয়াল-খুশিমতো একেক দিন একেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পণ্য বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ বেশির ভাগ এলাকায় বিকালের দিকে ট্রাক থাকে না। আবার অনেক জায়গায় বিক্রিই শুরু করা হয় দুপুরের পর। যদিও টিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেছেন, মনিটরে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি রয়েছে। তারা প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক মনিটরিং করেন। কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আমরা মনে করি, অভিযোগের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃতু্যর সংখ্যা। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। করোনার এই ভয়াবহ সময়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের মতামতগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করাসহ সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত যেন না হয় সেটি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে