প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বর্তমান সময়ের ভয়াবহতা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনার সংক্রমণে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। তেমনি দেশেও করোনার সংক্রমণ ও সংক্রমণে মৃতু্য বাড়ছে। উলেস্নখ্য, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীকে বৈশাখী শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মহামারিকালে সবাইকে সাবধান থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন- সরকার সবার সঙ্গে আছে। শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সঙ্গত কারণেই এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা জনসাধারণ যেমন করোনার কারণে বিপর্যস্ত, তেমনি অর্থনীতিসহ নানাবিধ কারণে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। ফলে সরকারপ্রধান যখন জাতির উদ্দেশে এটা বলেছেন, সরকার সবার সঙ্গে আছে, শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তখন স্বাভাবিকভাবেই জনসাধারণের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে। একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, মহামারিকালে সবাইকে সাবধান থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেই আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। এটা মনে রাখা দরকার, করোনা মোকাবিলায় সর্বোত্তম উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মহামারি মোকাবিলায় দেশবাসীকে সাহস জোগানোর পাশাপাশি সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেছেন। এটাও বলা দরকার, বর্তমানে দেশে লকডাউন চলছে। গত মঙ্গলবারের ভাষণেই প্রধানমন্ত্রী সংক্রমণ কমাতে বুধবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হতে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং জীবন বাঁচাতে তা মেনে চলতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে বলেও উলেস্নখ করেন। একই সঙ্গে এটাও বলেন, এর ফলে অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু সবাইকেই মনে রাখতে হবে- মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিধিনিষেধ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সার্বিকভাবে যে বিষয়গুলো নিয়ে বলেছেন, তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে এবং দেশের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ভাষণে করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করার বিষয়টিও তুলে ধরেন। (১) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে 'কর্মসৃজনকেই' প্রাধান্য দেওয়া; (২) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন : অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা; (৩) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি; (৪) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা : অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে। আর সেজন্য প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে বিভিন্ন সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। পলস্নী অঞ্চলে কর্মসৃজনের জন্য ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং রমজান ও আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬৭২ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি জেলায় করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা সুবিধার আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ এবং বিদ্যমান আইসিইউ সুবিধা আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। টিকার বিষয়টি উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। সে প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়া এটিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, টিকা নিলেই যে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হওয়া যাবে, তেমনটি ঠিক নয়। টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। লক্ষ্যনীয়, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তাৎপর্য অনুধাবন করে জনসচেতনতা আরও বৃদ্ধি হোক এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।