শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুনধারা
  ২১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব বিপর্যস্ত পরিস্থিতি যেন কাটিয়ে উঠতে পারছে না। আর এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দিন যত যাচ্ছে দেশে করোনার থাবা ততই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। জানা গেল, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ পর্যায়ক্রমে ঈদ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, এরই মধ্যে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউন শিথিল করার চিন্তা-ভাবনাও সরকারের আছে এমনটিও জানা গেছে।

আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনে কঠোর হওয়ারও বিকল্প নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি আমলে নেওয়া দরকার, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ মানুষের ভেতর যেন সচেতনতা বাড়ে সেই দিকটি আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া লকডাউন বা নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার কবলে জনজীবনের ওপর তা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে- সেটিকে আমলে নিয়েও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষসহ সামগ্রিকভাবে জনসাধারণের ওপর এর প্রভাব এড়ানো যাবে না। লকডাউনকে ব্যবহার করে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন মানুষকে জিম্মি করতে না পারে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। বাজারব্যবস্থার দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে।

উলেস্নখ্য, শপিং মল ও দোকান মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে শিল্প-কারখানার মতো মার্কেট খুলে দেওয়ার জন্য। ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় কিছু দিনের জন্য মার্কেট খোলার সুযোগ দিতে চায় সরকার। ফলে ঈদের আগে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচালনা পদ্ধতি আরোপ করে দোকান খোলার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। ফলে লকডাউন শিথিল হলেও স্বাস্থ্যবিধি যেন উপেক্ষিত না হয় সেদিকটি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

বলা দরকার, পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকার কথা ছিল। প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহণ চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। এর আগে রোববার রাতে করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এক ভার্চুয়াল সভায় বিধিনিষেধের সুপারিশ করে। এরপর সপ্তাহ শেষে আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও বলেছে কমিটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় মেয়াদ আরও বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে কমিটির সভায়।

আমরা উলেস্নখ করতে চাই, দেশে করোনা সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের ৮ মার্চ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর সরকার তা নিয়ন্ত্রণে ২৩ মার্চ প্রথমবার দেশজুড়ে সাধারণ ছুটির ঘোষণা দিয়েছিল। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। আর সে সময় সব অফিস-আদালত, কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নিম্নবিত্তের জীবন-জীবিকা আর দেশের উৎপাদনব্যবস্থা সংকটে পড়ায় বিভিন্ন মহলে লকডাউন শিথিলের দাবিও ওঠে। ফলে সরকার ৩১ মের পর থেকে ধাপে ধাপে বিধি-নিষেধ শিথিল করতে থাকে। বছরের শেষে এসে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা ছাড়া সব ধরনের কড়াকড়ি উঠিয়ে নেয়। আর এরই মধ্যে বিশ্বে করোনা টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা আসে। বাংলাদেশ কিন্তু দেশে করোনার প্রথম ধাক্কার পর চলতি বছরের মার্চের শুরু থেকে আবার নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকায় দেখা দেওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট (ধরন) বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতেও জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা উপেক্ষিত হতে থাকে। মাস্ক পরায় অনীহার বিষয়টি সামনে আসে।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুধাবন করা এবং লকডাউনের প্রভাব আমলে নেওয়ার পাশাপাশি করোনার এই ভয়াবহ সময়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের মতামতগুলো আমলে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করাসহ সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ জারি থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে