শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বর্বরতা দেশটিকে কি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

জাতিসংঘের সেই কুখ্যাত 'ভেটো' দেওয়ার ক্ষমতা রহিত হওয়া দরকার। মানবতাকে পায়ের নিচে পিষ্ট করা আর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব সংঘাতের পেছনে তথাকথিত এই ভেটো পাওয়ারই দায়ী। বিশ্বকে সভ্য হতে হলে এই ভেটো পাওয়ার রদ করতে হবে।
মাছুম বিলস্নাহ
  ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

১ ফেব্রম্নয়ারি (২০২১) মিয়ানমারে সামরিক অভু্যত্থান ঘটানোর পর দেশটিতে নারকীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বহু মানুষ তাজা গুলিতে মারা যাচ্ছে, শত শত মানুষ আহত হচ্ছে। পুরো দেশের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গত তিন দশক ধরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে- কারণ তারা মনে করছে তাদের প্রতিক্রিয়াকে এড়িয়ে গিয়ে সিভিল প্রশাসন একটি গণতন্ত্রায়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এতে তাদের অহঙ্কার এবং সুযোগ-সুবিধা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে নিজেদের হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই সামরিক বাহিনী অচমকা অভু্যত্থানের পথ বেছে নেয়। আমরা জানি যে, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৫০ সালে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। চীন এখানে বড় বড় মেগা প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করে আসছে। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা বহাল ছিল মিয়ানমারে কিন্তু ১৯৬২ সালে প্রথম সামরিক অভু্যত্থান শুরু হয়- যা চলে সুদীর্ঘ পাঁচ দশক। দীর্ঘ পাঁচ দশক সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হলেও পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে দ্রম্নত গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমাদের অবশ্য এখানে স্বার্থও ছিল কম, তারা তো স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না। ১৯৮৮ সালের দিকে মিয়ানমারের রাজনীতিতে একটু পরিবর্তনের হাওয়া শুরু হয়, কারণ অং সান সুচি ওই সময়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। ফলে সামরিক জান্তা তাকে বন্দি করে এবং সেই অবস্থায়ই ১৯৯১ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ২০১০ সাল থেকে সীমিত আকারে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হয় দেশটিতে যার ফসল হিসেবে দীর্ঘ পাঁচ দশকের পর ২০১৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালে ১৪ আগস্ট রাখাইন অঞ্চলে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সেনাবাহিনী কর্তৃক জাতিগত নিধনের শিকার হলেও সুচি পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন এমনকি নেদারল্যান্ডেসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলায় সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গান সুচি, ফলে তার নোবেল পুরস্কার বাতিল করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন ইসু্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর দূরত্ব বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর দেশটিতে দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এনএলডি পায় ৮৩ শতাংশ ভোট, যা মোট ৪৭৬টি আসনের মধ্যে ৩৯৬টি পায় সুচির দল।

অপরদিকে, বিরোধী সেনা সমর্থিত সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পায় মোট আসনের ৩৩টি। এতে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখতে পেয়ে 'সেনাবাহিনী' হতাশ হয়ে পড়েন। এতে দেশটির ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব দিন দিন হারিয়ে ফেলছে সেনাবাহিনী- যা সহজভাবে মেনে নেয়নি উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তারা। তারা মনে মনে ফন্দি আটছিল কীভাবে সব বিষয়ে তারা আবারও পুরোপুরি নাক গলাতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারকের মধ্যে ৬ জন নিয়োগ পেত সেনাবাহিনী কর্তৃক। এখন তা হ্রাস পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ সেভাবে নেই- যা অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ন্যস্ত- এগুলোর কোনটিই তাদের ভালো লাগার কথা নয়। তাদের অহঙ্কার এবং সুযোগ-সুবিধা হুমকির মুখে পড়ছে বলে তারা মনে করছে। ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে নিজেদের হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই সামরিক বাহিনী অচমকা অভু্যত্থানের পথ বেছে নেয়। তাছাড়া জেনারেল হ্লাইংয়ের জন্যই এই অভু্যত্থান ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে কারণ এ বছরই তার পদত্যাগ করার কথা ছিল। তার বয়স এখন ৬৫ অর্থাৎ অবসরে যাওয়ার কথা পাঁচ বছর আগেই। কিন্তু রাখাইনে যে মানবাধিকার অপরাধ ঘটিয়েছে সেজন্য দায়িত্ব ছেড়ে দিলে আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন বলে ক্ষমতায় শীর্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

মিয়ানমারের যেদিন নতুন জাতীয় পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছিল, সেদিনই খুব সকালের দিকে 'তাতমাদাউ' নামে পরিচিত সামরিক বাহিনী ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ক্ষমতা দখল করার ঘোষণা দেয়। তারা আনুষ্ঠানকিভাবে স্টেট কাউন্সিলর তথা দেশটির ডি ফ্যাক্টো লিডার তথা কার্যকর নেতা অং সান সুচি এবং অন্যান্য সিনিয়র নেতা ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বদের গ্রেপ্তার করে। সামরিক বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এই সংকট সৃষ্টি করেছে যাতে তারা পুনরায় নিজেদের 'সংবিধান ও দেশের ত্রাণকর্তা' দাবি করতে পারে। এভাবে তারা তাদের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক শত্রম্নকে ঘায়েল করার কৌশল নিয়েছে। এখনো সামরিক বাহিনীর হাতে অফুরন্ত ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা আছে। স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিষদের ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। সংবিধানের প্রধান প্রভিশনগুলো তথা মূলনীতি সংশোধনীর ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সুচিসহ বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারের রাজপথে এখন লাখো মানুষ যে জন্য সেনাবাহিনী হয়তো মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না- কারণ তারা গত পাঁচ দশক ধরে গোটা দেশের হর্তাকর্তার দায়িত্ব নিয়েছে কিন্তু কখনোই এভাবে মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখেনি এবং গুলি ও মেশিনগানের সামনে বুক পাততে দেখেনি। ১ ফেব্রম্নয়ারি দেশটিতে সামরিক অভু্যত্থান ঘটানোর পর গ্রেপ্তার করা হয় স্টেট কাউন্সেলর সুচি ও প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ 'ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির' শীর্ষ নেতাদের। জারি করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা। সেনাবাহিনী এক বছর পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে কিন্তু সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করছে না। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলমান শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গুলিবর্ষণ করছে। তারা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের পাশাপাশি তাজা বুলেটও ছোড়ে। বুলেট ছোড়ার আগে কোনো রকম হুঁশিয়ারি কিংবা সতর্কবার্তাও দিচ্ছে না। তারা মাথা, পেট ও পেছনে গুলি করছে, মৃতু্যর পর পরই জনতা আবার রাজপথে। এ পর্যন্ত ৬০০ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ভাষা শুনলে অবাক হতে হয়। তারা বলছেন, 'সেনারা যদি আমাদের পেছনে ঠেলতে চায়, আমরা আরও জেগে উঠব। তারা যদি আমাদের আক্রমণ করে, আমরা আত্মরক্ষা করব। সামরিক বুটের সামনে আমরা কখনো মাথানত করব না।' এ অবস্থায় কাচিন আর্মি, টাঙ লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি মিলে 'ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স' নামে একটা জোট করে ইতিমধ্যে সামরিক অভু্যত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা জানিয়েছে। শান স্টেটের 'রেস্টোরেশন কাউন্সিল অব শান'- ও কু্যর বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও মিয়ানমারে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র ২০টির মতো সংগঠন আছে। তারা অন্তত চারটি (ওয়া আর্মি, কারেন ইউনিয়ন, আরাকান আর্মি ও কাচিন আর্মি) দেশের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এরা কেউই কু্যর পক্ষে নয়। এখনো সেনাবাহিনী বর্বতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। তার মানে কি? দেশটি কি তাহলে গৃহযুদ্ধের দিকে আগাচ্ছে? মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ইতিমধ্যে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। তিনি বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ দ্রম্নত পদক্ষেপ না নিলে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য।

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব পড়বে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের সীমান্তবর্তী দেশে। এ দেশগুলোর সবগুলোতে ইতিমধ্যে মিয়ানমারের কিছু কিছু শরণার্থী আছে। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পুরানোদের সঙ্গে নতুন করে কত গুণ শরণার্থী যুক্ত হবে, সেটা অনুমান করা সহজ নয়। মিয়ানমারের পরিস্থিতি হতে পারে সিরিয়ার চেয়েও ভয়াবহ। কারণ এখানে বহু গেরিলা গ্রম্নপের হাতে অনেক আগে থেকেই বিপুল অস্ত্র আছে, আছে ঐতিহাসিক জাতিগত রেষারেষি- যা যুদ্ধের রসদ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর সেনাবাহিনীর নির্বিচার মানুষ হত্যা করার গুণতো দেখতেই পাচ্ছি। প্রতিবাদকারীদের মাথা ও বুকে গুলি করা হচ্ছে তারপরেও তারা জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। শত শত মানুষকে হত্যা আর হাজার হাজার মানুষকে জখম করার মধ্যেও ২৭ মার্চ জান্তা সরকার নির্লজ্জের মতো বার্ষিক সশস্ত্রবাহিনী দিবস পালন করে। ২৬ মার্চে এক টেলিভিশন বার্তায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জান্তা সরকার বলে ওইদিন যদি কেউ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তাহলে তাদের মাথায় ও পেছনে গুলি করা হবে। কত বড় অসভ্যতা! কত নিষ্ঠুর বর্বরতার কথা! তৃতীয় বিশ্বের সেনাবাহিনীর এই হচ্ছে চরিত্র। তারা দেশকে বহিঃশত্রম্নর হাত থেকে রক্ষা করবে আর 'পিস টাইমে' কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে দেশের মানুষের সেবা করবে। এসব বাদ দিয়ে তারা নিজ দেশের মানুষের ওপর বীরত্ব প্রদর্শন করে। বিশ্ববাসী তাকিয়ে দেখে আর দুয়েকটি বিবৃতি দেয়। দেশের মানুষকে মারার জন্য শুধু পুলিশ আর সেনাবাহিনীই ব্যবহার করছে না সামরিক জান্তা। বিমানবাহিনীও ব্যবহার করছে। বিমান থেকে গুলি ও বোমা ফেলা হচ্ছে আর মানুষ যুদ্ধের মধ্যে মাটির গুহায় আশ্রয় নিচ্ছে। এভাবে পুরো দেশকে নরকে পরিণত করেছে। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে মিয়ানমারের মানুষের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না অর্থাৎ সীমান্তবর্তী দেশগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ব শরণার্থীদের ভার আর বইতে পারছে না। বর্তমানে তুরস্ক থেকে ব্রাজিল পর্যন্ত অন্তত ২৫টি দেশে সিরিয়ার শরণার্থী আছে। লাখের ওপরে আছে অন্তত ৮টি দেশে। তুরস্ক একাই সামলাচ্ছে ৩৫ লাখ। আর তাই মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয়ও ভয় বাড়ছে।

একজন মানুষ যদি অন্য একজন মানুষের সঙ্গে শুধু ঝগড়া করে, তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় কিংবা উত্তেজানপূর্ণ আলোচনা হয়, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলেই তাদের মধ্যে অনুশোচনা শুরু হয়, মনে অত্যন্ত খারাপ লাগে- কেন এটি করতে গেলাম, কেন অমুকের মনে কষ্ট দিতে গেলাম। এটি হচ্ছে মানবতা- যে তখনো মরে যায়নি তারই লক্ষণ। আর অন্য একজন মানুষকে হত্যা করা সে তো হত্যাকারীকে পাগল বানিয়ে ছাড়ে। কিন্তু জান্তা বিনা কারণে নিজেদের পশুত্বকে প্রকাশ করার জন্য, অহংবোধকে ধরে রাখার জন্য প্রতিদিন নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করছে। তারা সামরিক পোশাক পরে দেশের মানুষের ও গণতন্ত্রের মুক্তিদাতা সাজতে চাচ্ছ। কে দিয়েছে তাদের এই বর্বরতা দেখানোর অধিকার? ফেসবুকে একটি ভিডিওতে দেখলাম একটি বাঘ হিংস্রতা সহকারে একটি হরিণকে খেতে এসেছে। এসে দেখে হরিণটি মাত্র বাচ্চা প্রসব করেছে। ফলে, কাউকেই সে হত্যা করেনি বরং ছোট হরিণের বাচ্চাটিকে সে আদর করে মায়ের কোলে দিচ্ছে। হায় মানবতা! আমরা কী দেখছি মিয়ানমারে। শিশু নারী, নার্স, শিক্ষক, সবাইকে গুলি করে মারা হচ্ছে- শুধুমাত্র তাদের পশুত্বকে প্রকাশ করার জন্য। বিশ্বনেতৃবৃন্দ ও জাতিসংঘ শুধু বিবৃতি দিয়েই যাচ্ছে। জাতিসংঘের দায়িত্ব ও কর্তব্য এখন পরিবর্তন হওয়া দরকার। মানুষ মেরে সাফ করে ফেলছে এক এক দেশে, সামরিক জান্তা ও অত্যাচারীরা বিশ্বে নরকের যন্ত্রণা ডেকে আনছে আর জাতিসংঘ শুধু 'নিন্দা জ্ঞাপন করছে'। মনে হয় অত্যাচারীদের চোখে খুব লজ্জা। নিন্দা জ্ঞাপন করলে লজ্জায় তারা এসব কাজ করবে না।

জাতিসংঘের সেই কুখ্যাত 'ভেটো' দেওয়ার ক্ষমতা রহিত হওয়া দরকার। মানবতাকে পায়ের নিচে পিষ্ট করা আর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব সংঘাতের পেছনে তথাকথিত এই ভেটো পাওয়ারই দায়ী। বিশ্বকে সভ্য হতে হলে এই ভেটো পাওয়ার রদ করতে হবে।

মাছুম বিলস্নাহ : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে