বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব

যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি- এমন বিষয় যখন সামনে আসছে, তখন তা কতটা উদ্বেগজনক বলার অপেক্ষা রাখে না। সময়ে বৃষ্টি হয় না, আবার কখনো বৃষ্টির বিরামহীন যাতনা। শীতে অনুভূত হয় না ঠান্ডা আমেজ। বৈশাখেও দেশের তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই করছে। উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে খরায় চৌচির ফসলের মাঠ। শুকিয়ে গেছে পুকুর, খাল-বিল ও ছোট নদী। দেশের একপ্রান্ত রাজশাহীতে দাবদাহে ফসল পুড়ছে, অন্যপ্রান্তে হাওড়ে আগাম বন্যা চোখ রাঙাচ্ছে। ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, এমন পরিস্থিতিতে গতকাল পালিত হলো বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য 'আমাদের পৃথিবী-আমাদের পুনরুদ্ধার করতে হবে'।

আমরা মনে করি, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একইসঙ্গে যত দ্রম্নত সম্ভব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। এর আগে বিভিন্ন সময়েই জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যে পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা আছে- আর তাতে বাংলাদেশের ঝুঁকির বিষয় আলোচনায় এসেছে- যা এড়ানো যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিষয়টিকে সামনে রেখে দেশের সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের গড় তাপমাত্রা বছরের এপ্রিল-মে মাসে এক ডিগ্রি এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি বেড়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় দৃশ্যমান প্রভাব হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় লবণাক্ততা বৃদ্ধি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভৌগোলিক অবস্থান এবং ব-দ্বীপপ্রধান দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন- ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, নদীভাঙন বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী। বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটছে, তার প্রভাব দেশে প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান। ফলে এটাও স্পষ্ট হচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলছে। উপকূলের মানুষ প্রতিনিয়ত জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। জলবায়ুর প্রভাবে এ পর্যন্ত ঝুঁকিতে উপকূলের সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ- এমনটিও জানা গেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।

এ ছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্রাফটেরের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। নরওয়েভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইএলইউর সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় ঢাকা শহরের বায়ুর গুণগতমানের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) তথ্যানুযায়ী বিশ্বের ছয়টি দুর্যোগপ্রবণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের এক প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। মোটকথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানসহ নানা ক্ষেত্রে পড়ছে। বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা। ফলে সামগ্রিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। গত বছর জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছিল, গত ২০ বছরে বিশ্বে চরম আবহাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। আর এতে বিশ্বব্যাপী মানুষের পাশাপাশি অর্থনীতিরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। সামনে অপেক্ষা করে আছে আরও দুর্ভোগ।

সর্বোপরি বলতে চাই, এর আগে জানা গিয়েছিল, আগামী ১০ বছরে তাপপ্রবাহ বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা- এ বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। বিভিন্ন সময়ে সরকারকে দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা আরও উন্নত করা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের কৌশল বাস্তবায়নে অর্থ ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শও উঠে এসেছে। এ ছাড়া জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় সংক্রান্ত নানা বিষয়ই বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি- এটিকে এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে