বঙ্গবন্ধু ১৯৩৮ সাল থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৩৯ সালেই মুসলিম লীগ গঠন করেছিলেন। এবং তখন থেকে দেশ এবং দেশের সাধারণ মানুষ ছাড়া আর কিছু ভাবেননি। তাদের বাড়িতে পত্রিকা রাখা হতো, তিনি নিয়মিত পত্রিকা পড়তেন। শেরেবাংলা এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যও পেয়েছিলেন সেই ১৯৩৮ সাল থেকেই। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর সভা-সমাবেশ-বক্তৃতা করে তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করেছিলেন।
এরপর আবার আন্দোলন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর যখন দেখলেন, বাঙালিদের অধিকার হরণ হচ্ছে, তখন শুরু করেছিলেন আবার সংগ্রাম-আন্দোলন। এভাবে ৩৮ বছরের (১৯৩৭-১৯৭৫) দীর্ঘ সংগ্রামের জীবনাভিজ্ঞতা তার নিজস্ব দর্শনে স্থিত হতে সাহায্য করেছিল। তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, জনগণই হবে প্রজাতন্ত্রের মালিক। তাই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের মূল হলো বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের প্রতি ভালোবাসা। এছাড়া বিশ্ব রাজনীতিও তার দর্শনের সহায়ক হয়েছিল। যেমন- সমাজতান্ত্রিক বিপস্নব, সোভিয়েত রাশিয়ার আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পুঁজিবাদের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের স্নায়ুযুদ্ধ, বিশ্বজুড়ে ঔপনিবেশিকতাবিরোধী আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক চীনা বিপস্নব, চীনের অগ্রযাত্রা, সাংস্কৃতিক বিপস্নব, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন, কিউবার বিপস্নব, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ইত্যাদি। বিশ্ব পরিস্থিতি এবং দেশের অবস্থা- এই দুই অভিজ্ঞতায়ই তিনি বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং বিশৃঙ্খল ছিল। এর কারণ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের তৎপরতা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মার্কিন দূতাবাসের দায়িত্ব নেয় ইউজিন বোস্টার। দায়িত্ব নিয়ে পরদিনই খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে দেখা করে। এদের যৌথ কর্মকান্ড শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন থেকে। অন্যদিকে চীনাপন্থি বাম সংগঠন এবং নকশালরাও শুরু করে খুন, ধর্ষণ এবং লুট-পাট। এরা সাধারণ মানুষের হয়রানি করা শুরু করেছিল। আবার ছাত্রলীগও দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। শফিউল আলম প্রধান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছিল।
এই বৈরী পরিবেশেই বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন হয়েছিল। সংবিধানের মূলনীতি ছিল- বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। মওলানা ভাসানী এই সংবিধানেরও বিরোধিতা করেছিলেন।
এ সময় প্রকৃতিও বৈরী হয়েছিল। বন্যায় সারা দেশ তলিয়ে গিয়েছিল, ধ্বংস হয়েছিল মানুষের বসতবাড়ি, প্রাণ হারিয়েছিল অসংখ্য মানুষ। মারা গিয়েছিল লাখ লাখ গবাদিপশু, ধ্বংস হয়েছিল জমির ফসল। সড়ক এবং ট্রেন যোগাযোগ হয়েছিল বিচ্ছিন্ন। এই অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সাহায্য চেয়েও পাননি। মজুদদাররা প্রয়োজনীয় খাদ্য বাজারে ছাড়ল না। এই সুযোগে মোশতাকসহ সব বিরোধীপক্ষ বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতা শুরু করেছিল এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল গোপনে। এই অবস্থা সামাল দিতে তিনি বাকশাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। যেন অবাধ্য সন্তানকে কঠোর হাতে দমন করে ভালো পথে আনার কৌশল। তিনি বাকশালের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছিলেন।
ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মুখে ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭৪ শেখ মুজিবুর রহমান জরুরি অবস্থা জারি করেন, যা তাকে কোনো রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতাপ্রধান করে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী উত্থাপন করেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে প্রচলিু সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে বাকশালব্যবস্থা চালু করা হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এবং জাতীয় লীগ নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট। সব মানুষকে নিয়ে একটি জাতীয় দল গঠন করে বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক তথা দীন-দুঃখী মেহনতি শোষিত মানুষের সার্বিক মুক্তি চেয়েছিলেন তিনি। একে তিনি 'দ্বিতীয় বিপস্নব' বা 'শোষিতের গণতন্ত্র' হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
বাকশালের উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদী শোষকদের প্রতারণামূলক গণতান্ত্রিক শাসন এবং শোষণের অবসান ঘটিয়ে শোষণহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এবং এজাতীয় সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু সবাইকে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্যাচার করে বঙ্গবন্ধু নাকি একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। তাছাড়া বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, কিন্তু মূলত বড় দুটি জোট আছে আর কিছু ছোট দলের একটি জোট আছে। বড় জোটে ১৮/১৯টি দল থাকলেও সবাই এক নেত্রীর উপর আস্থা রাখে বা তার সিদ্ধান্তে চলে। তা হলে সেই সময় বাকশালের রাজনৈতিক ফ্রন্টের নেতারা বঙ্গবন্ধুর মতো মহানায়কের উপর আস্থা রাখলে সমস্যা কী ছিল? অতএব, ষড়যন্ত্রকারীরা উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচারে লিপ্ত ছিল নতুুন প্রজন্মকে ভুল ধারণা দেওয়ার জন্য। সেই সময় কিছু পত্রিকা ও দেশবিরোধী মিথ্যা সংবাদ প্রচারে লিপ্ত ছিল, সেই সব পত্রিকা বন্ধ করে গণতান্ত্রিক মনা পত্রিকাগুলো চালু থাকে। যেমন- এখনও কিছু পত্রিকা একই জাতীয় অপরাধে বন্ধ আছে।
বঙ্গবন্ধু বাকশালে প্রাথমিক যে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনলেন তা হলো বাধ্যতামূলক সমবায় সমিতি. এতে বলা হয় প্রতিটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে জমি চাষ করবে। চাষের উপকরণ দেবে সরকার। উৎপাদিত ফসল তিন ভাগ হবে- একভাগ পাবে জমির মালিক, এক ভাগ চাষে নিয়োজিত শ্রমিকরা এবং আরেক ভাগ সরকার। কিন্তু তার এ পদ্ধতির সুফল জনগণকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় কাঠামো একেবারে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনায় গ্রামকেই প্রশাসনিক ও উৎপাদন ইউনিট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা চালু হলে সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হতো। আমলাভিত্তিক প্রশাসনের অবসান চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মূল রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণকে সরাসরি সুবিধা দেওয়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দকে 'বিনিয়োগ' নামে অভিহিত করেছিলেন। সমবায় গঠন করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। চারটি মূলনীতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশের দীন দুঃখী, শোষিত-বঞ্চিত, শ্রমজীবী মেহনতি মানবগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকার এবং তাদের সমষ্টিগত প্রকৃত 'গণতান্ত্রিক একনায়কতান্ত্রিক' শাসন প্রতিষ্ঠার কথা উলেস্নখ করেছেন। আরও উলেস্নখ করেছেন- প্রচলিত গণতন্ত্রের বদৌলতে সমাজের মাত্র ২৫ ভাগ লোকের বা প্রভাবশালী ধণিকশ্রেণির স্বৈরাচারী শাসন ও বল্গাহীন শোষণকার্য পরিচালনার পথই প্রশস্ত হচ্ছে; প্রকৃত গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের ভেতরে কোনো বিরোধ নেই; সমাজের বাস্তব অবস্থাই মানুষের চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে। সংবিধানের তাই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে 'সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি' কথাটি রয়েছে। সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে সমষ্টিগত মানবগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার চিন্তা তিনি করেছিলেন। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে এক পরিবারভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া প্রশাসনকেও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক করার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেনাবাহিনীকে দেশের দৈনন্দিন কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।
এই সাক্ষাৎকারেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি যদি নাও থাকেন তার দৃঢ় বিশ্বাস বাঙালিরা যে কোনো মূল্যে তার রেখে যাওয়া আদর্শ ও লক্ষ্য একদিন বাংলার বুকে বাস্তবায়ন করে ছাড়বেন। এতে প্রমাণিত হয় বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ দ্বিধাহীনভাবে বাঙালির উপর আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর মনে ছিল সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা। জীবনের শুরু থেকে সব জীবন তিনি দেশের মানুষের মুক্তির চিন্তা করে গেছেন। তাই তিনি সব মানুষের একটি পস্ন্যাটফর্ম হিসেবে বাকশাল গঠন করেছিলেন। কিন্তু কাজ শুরু করতে পারেননি। বাকশাল গঠন হওয়ার পর ধনী এবং প্রভাবশালী মহলও শত্রম্নতা শুরু করে। তারা মনে করেছিল, তাদের হাত থেকে সম্পদ চলে যাবে কৃষক-শ্রমিকের হাতে। আবার প্রশাসনের আমলারাও চিন্তা করেছিল তাদের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাবে জনপ্রতিনিধিদের কাছে; কিংবা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। একইভাবে সামরিক বাহিনীতেও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই সব বিশ্বাসঘাতক সুবিধাবাদী, সাম্রাজ্যবাদী এবং পুঁজিবাদীদের সম্মিলিত চেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ১৫ আগস্টে নৃশংশভাবে হত্যা করে ও ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় জঘন্যভাবে হত্যা করে। তবে বাকশালের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি, বাকশালের সব ধারা বাস্তবায়ন হলে এতদিনে বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।
কিন্তু তার হত্যার পরে এর ভবিষ্যৎ বিচারপ্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ইনডেমনিটি আইন জারি করা হয়। রাষ্ট্রের সব গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো, বঙ্গবন্ধুর কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ২১ বছর রেডিও-টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হয়নি। সামরিক শাসকের দল সেখানেই থেমে থাকেনি, তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে নানান মিথ্যে ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে ভরা গল্প চারদিকে ছড়িয়ে দিল। সামরিক শাসকদের পালিত কিছু বুদ্ধিজীবী এই প্রচারের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন খুব নিষ্ঠার সঙ্গে। আর সেসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তি দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরতে থাকে বছরের পর বছর। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল; সুদীর্ঘ ২১ বছর একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে এসব মিথ্যা এবং বিভ্রান্তির গল্প শুনে। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সব কীর্তিকে মুছে ফেলতে যত চেষ্টা করা দরকার তারা সব চেষ্টাই চালিয়েছে।
যে কারণে মহামতি লেনিনকে জনসভায় এক মহিলা জঙ্গিকে দিয়ে গুলি করে তার আয়ু কমাইয়ে তার কর্মকান্ডের ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম হয়। ঠিক একই কারণে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীসহ অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। অতি দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এবং দৃশ্যমান বর্তমানে রাশিয়ার মানবিক মূল্যবোধের সমাজতন্ত্র, মাও সে তুংয়ের চীনসহ অনেক সমাজতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতালিপ্সু, কোটিপতি ধনিক শ্রেণির আধিপত্য, অসাম্য অর্থনীতি সৃষ্টিতে সাম্রাজ্যবাদগোষ্ঠী আত্মতৃপ্তি লাভ করতেছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এগোতে হবে।
শিক্ষা খাতে উন্নত বিশ্বের মতো কমপক্ষে জিডিপির ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে, গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশীয় অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। একদিকে শিক্ষিত বেকার থাকবে অন্যদিকে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের জন্য বিশাল অর্থের ব্যয় অনাকাঙ্ক্ষিত। বঙ্গবন্ধুর চমৎকার পরিকল্পনা অনুযায়ী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চুক্তি অনুযায়ী আমাদের শিক্ষিত বেকারদের স্কলারশিপের মাধ্যমে পাঠিয়ে যুগোপযোগী করতে হবে। প্রয়োজনে দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কৃষিশিল্পসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের মতো ইন্টারনিশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে কার্যকর উদ্যোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও কুটিরশিল্প বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া সময়ের দাবি। বাংলা, ইংরেজি ও মাদ্রাসা শিক্ষার অসামঞ্জস্যতা দূর করতে হবে। ছাত্রসমাজকে সচেতন করতে যুগোপযোগী, গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক বিষয়, দেশের সঠিক ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি গণিত, বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান বিতরণের লক্ষ্যে সিলেবাসের ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলা, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা শিক্ষার ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞান আহরণে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তর ও মাধ্যমিক স্তর শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে। দেশের অল্পশিক্ষিত/অশিক্ষিত বেকারদের প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষা ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে কিংবা ট্রেনিং প্রাপ্ত মানব সম্পদ রপ্তানি করে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে হবে এবং দেশের ও বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি করতে হবে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সময়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রীর জাতির পিতার অসমাপ্ত দ্বিতীয় বিপস্নবের কাজের শুরুতেই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন- কৃষক-শ্রমিকরা দুর্নীতিবাজ না, তারা আমাদের আহার ও বেতন জোগান দেয়। তাদের যেন সম্মান করি; চোরেরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। ইত্যাদি। করোনার সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা ও মানবরূপী পশুরা খাদ্যসংকট, নানা অরাজগতা, ধর্ষণ জাতীয় অপকর্মে লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
আজ করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব তথা বাংলাদেশের অর্থনীতি করুণ অবস্থায় পতিত। এই দুঃসময়ে উলিস্নখিত বঙ্গবন্ধুর উপদেশ কৌশলে পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপস্নবের কাজ শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে রাশিয়া, কিউবা ও চীনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুদ্ধি অভিযানে নামতে হবে। দেশীয় অভিজ্ঞ ও সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ৩/৫ জনের মনিটরিং কমিটি করতে হবে। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাজের চাপ অনেকাংশ কমে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা, দীর্ঘায়ু জাতির কল্যাণে একান্ত জরুরি। তাই তাদের পরামর্শ ও নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ও মানবরূপী পশুদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা না করে শ্রেণিভেদে সশ্রম কারাদন্ডসহ ফাঁসির কার্যকর বিধান এবং দ্রম্নত বিচারের ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে ভেজাল খাদ্য ও ওষুধসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রির এবং ধর্ষণের মতো ঘৃণিত কাজ বন্ধ করার জন্য এদের দ্রম্নত বিচার আইনে উলিস্নখিত শাস্তি নিশ্চত করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জাতির পিতার আদর্শকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোদ্ধা হিসেবে দেশ বিনির্মাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখব। তা হলে অবশ্যই একদিন আমরা বিশ্বসমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।
প্রফেসর ড. প্রিয় ব্রত পাল : অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়