করোনাকালে মানুষের জীবন-জীবিকা

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, ঢাকা
অর্থনীতি হলো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাণ। রাজনীতি কোন পথে চলবে তাও অনেকাংশে নির্ধারণ করে অর্থনীতি। গত বছর করোনাঘাতের আগে বাংলাদেশ ছিল দুনিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। নিম্নআয়ের গন্ডি থেকে উন্নয়নশীল শুধু নয়, উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। করোনাভাইরাস সেই সোনালি স্বপ্নকে অনেকটাই নিষ্প্রভ করে দিয়েছে। ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বদলে অর্জিত হয়েছে দুই শতাংশ। এ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ দুনিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে এমন কথাই বলেছিল বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো। কিন্তু হঠাৎ করে করোনার দ্বিতীয় স্রোত বাংলাদেশে ভয়াল থাবা বিস্তার করায় অর্থনীতির জন্য তা কতটা বিপদ সৃষ্টি করবে সে সংশয়ে দানা বেঁধে উঠছে। বিশেষত লকডাউনকে হেলাফেলার সুযোগ নিলে তা হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করবে। লকডাউনকে গত বছরের মতো কেউ যেন সাধারণ ছুটি হিসেবে না নেয় তা নিশ্চিত করা জরুরি। এ সময়ে সমাজের যারা গরিব-একদম দিন আনে দিন খায় তাদের খাদ্য জোগানোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। গার্মেন্ট খাতে স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে নিশ্চিত হবে সে ব্যাপারেও ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নিতে হবে। গার্মেন্ট মালিকরা যাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেন তা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতের দৃষ্টান্ত থেকে বলা যায়, কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতির জন্য করোনা কতটা আঘাত হানবে তা নির্ভর করছে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতির ওপর। করোনাকালে অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়লে তা হবে আত্মহত্যার নামান্তর। ইতিমধ্যে গত বছরের করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতিতে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকায় সংকট ঘনীভূত হওয়ায় সহিংসতা উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে লকডাউন নয়, কীভাবে সবকিছু চালু রেখে অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া যায় সে কৌশল রপ্ত করতে হবে। সেটিই হবে দেশবাসীর জীবন-জীবিকা সুরক্ষার প্রকৃষ্ট পথ। এদিকে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় আগ্রাসনের মুখে সোমবার থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউনে সব ধরনের জরুরি সেবা খোলা থাকবে, চালু থাকবে পণ্য পরিবহণ, কাঁচাবাজার ও শিল্প-কলকারখানা। সংবাদপত্রসহ সব ধরনের গণমাধ্যম যথারীতি চালু থাকবে। বন্ধ থাকবে বাস, ট্রেন, লঞ্চ এবং বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। ব্যাংক চালু থাকবে সীমিত পরিসরে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার ৩৭৩ দিন পর হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউনের সোজাসাপ্টা পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে শিল্পোৎপাদন এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়েও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। সংক্রমণ রোধে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও এটিকে কেন্দ্র করে যে হারে মানুষ শহর থেকে গ্রামের দিকে ফিরেছে এবং সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে যানবাহন ব্যবহার করেছে তাতে এর সুফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। লকডাউনের ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে পড়বে। এসব অসহায় মানুষের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায় সে উদ্যোগও থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বড় আকারে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি অন্তত ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল ও ভুটান তা প্রমাণ করেছে। সেদিকে সময়মতো তৎপর না হওয়ায় সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আমার মতে, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অর্থনীতি দুই বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। করোনাভাইরাসের জীবনহানির চেয়েও কেউ যাতে না খেয়ে প্রাণ না হারায় সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের কর্মকান্ড সচল রাখতে যত্নবান হতে হবে। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর হওয়ারও বিকল্প নেই। সপ্তাহঅন্তে, লকডাউনের অবসান ঘটিয়ে গরিব ও নিম্নবিত্তদের স্বার্থে সর্বস্তরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হলে সেটিই হবে সর্বোত্তম পথ।