শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পথশিশুদের জন্য ভাসমান স্কুল

যোবায়ের ইবনে আলী. ঢাকা
  ২৫ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সপ্তাহের সাতদিনই বিকেলবেলা দেখা মেলে একটা ভাসমান স্কুলের। নেই কোনো অবকাঠামো। খোলা আকাশের নিচেই চলে এই বিদ্যালয়। এখানকার বেশির ভাগ শিশুরাই ফ্লাক্সে চা নিয়ে হকারি করে। অনেকে দোকানে কাজ করে আবার অনেকে পার্শ্ববর্তী কারখানাগুলোতে কাজ করে।

ঠিক বিকেল চারটা আনন্দের সঙ্গে সমাবেত হয় স্কুলে। স্কুল চলে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত। আর্তসেবা নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তত্ত্বাবধানে চলে এই বিদ্যানিকেতন। ৬-৭ জন পথশিশু এবং তিনজন স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ে বিদ্যানিকেতনের যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালের ২০ ফেব্রম্নয়ারিতে। বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা হৃদয় ভূইয়া এবং প্রথম কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন আলী আফসার এবং সহকারী সমন্বয়ক ছিলেন মামুন আহমেদ জয়। হৃদয় ভূইয়া

\হপথশিশুদের নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখলেন অধিকাংশ পথশিশুদের তেমন কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এদের মধ্যে বড় একটি অংশ ভবিষ্যতে অপরাধ জগতে জড়িয়ে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ বেছে নিতে পারে ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশা। এরপর তাদের ২-১ জনের সঙ্গে কথা বলেন হৃদয় ভূইয়া, গড়ে তোলেন ভালো সম্পর্ক। তাদের পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝান তিনি। তারপর সুযোগ বুঝে প্রস্তাব দেন যদি ওদের পড়ান তবে কি ওরা পড়াশোনা করবে কিনা। ব্যাস তাদের সম্মতিতে তেরপল কিনে এনে বসে পড়েন হৃদয় ভূইয়া, আলী আফসার এবং মামুন আহমেদ। সময় পেরোতে থাকে। শাহেদদের সঙ্গে ধীরে ধীরে যুক্ত হন অনেকে।

বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকদের এই সংখ্যা বেড়ে ১৬-এর ঘরে এসেছে। পথশিশুদের সংখ্যা ৬ থেকে বেড়ে ৬০ হয়েছে এখন।

কলেজের পাশে খোলা আকাশের নিচে। এরপর আস্তে আস্তে তাদের দেখা-দেখি আরও বাচ্চারা স্কুলে আসতে থাকে।

স্কুল পরিচালনার সুবাদে প্রতি ৬ মাস পর পর স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে থেকে দুজন সমন্বয়ক নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যানিকেতনের বর্তমান দুজন সমন্বয়ক আছেন একজন দেলোয়ার হোসাইন অন্যজন আয়েশা তাহিরা। অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নানা রকম পস্ন্যানিং এবং কাজ করে যাচ্ছেন তারা। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া হয়নি কোনো বিষয়। সপ্তাহের সাতদিন পড়ানো হয় সাতটি বিষয়। শনিবার বাংলা, রোববার ইংরেজি, সোমবার মজার গণিত, মঙ্গলবার মজার বিজ্ঞান, বুধবার ড্রয়িং এবং ক্রাফটিং, বৃহস্পতিবার স্টোরি এবং আবৃতি এবং শুক্রবার পড়ানো হয় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা।

বিদ্যানিকেতনে বাচ্চাদের প্রাক- প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে আমাদের কার্যক্রম শুধু এই খোলা আকাশ পর্র্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। একটি বাচ্চাকে যখন মোটামুটি স্কুলে ভর্তি করানোর উপযোগী হয়ে ওঠে তখন তাকে একজন ডোনারের মাধ্যমে তাকে স্কুলে বা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা?

এটি শুধু একটি স্কুলই নয়, এটি পথশিশুদের জন্য পরিচর্যায় ত্রম্নটি না রাখার চেষ্টা করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। শিক্ষার পাশাপাশি পথশিশুদের খাদ্য এবং চিকিৎসার উপরে নজরদারি করেন বিদ্যানিকেতনের স্বেচ্ছাসেবকরা। স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যক্তিগত জোগান দেওয়া অর্থেই চলে যাবতীয় কার্যক্রম। তবে বাচ্চাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। এতে বেশ খুশি স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে, বাচ্চাদের খরচ বহন করা কিছুটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। তারা আশা করে সমাজের বিত্তবান দানশীলদের ভূমিকা থাকলে এগিয়ে যেতে কোনো বাধা থাকবে না বিদ্যানিকেতনের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে