বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও পুরান ঢাকায় আগুন

কেমিক্যাল গোডাউন সরানো হয়নি
নতুনধারা
  ২৫ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

মৃতু্য যেন কোনোভাবেই আমাদের পিছু ছাড়ছে না। নানাভাবে মানুষের অকাল মৃতু্য হচ্ছে। এই অকাল মৃতু্য রোধ করা যাচ্ছে না। মানুষ পথে, রাজপথে, বন্যায়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে, ঘূর্ণিঝড়ে, নৌ-রেলপথে, সড়ক দুর্ঘটনায়, আগুনে পুড়ে ও গ্যাস বিস্ফোরণে মারা যাচ্ছে। আর করোনায় মৃতু্যর কথা তো বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশে এখন আর স্বাভাবিক মৃতু্যর নিশ্চয়তা নেই। যাদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তারা রয়েছে চরম উদাসীন। এক মৃতু্যর রেশ না কাটতেই আরেক মৃতু্য এসে হাজির হয়। আমরা শোকগ্রস্ত ও হতাশ হই। এটাই বাংলাদেশের সমাজে বাস্তবতা। বাংলাদেশের মানুষের নিয়তি।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীর পুরান ঢাকার আরামানিটোলায় ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। ওই ভবনের নিচে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। আশপাশের প্রায় সব ভবনেই এ ধরনের গুদাম রয়েছে। এ দুর্ঘটনায় ৪ জন মারা গেছেন, ১৭ জন আহত হয়েছেন। ধোঁয়ার কারণেই বেশির ভাগ মানুষ অসুস্থ হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভবনের বাসিন্দাদের জানালার গ্রিল কেটে বের করে আনা হয়েছে। নিহতদের দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। হাজী মুসা ম্যানসনে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো অবৈধ কেমিক্যালের দোকান। এদের কোনো ধরনের লাইসেন্স নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এ কেমিক্যাল গোডাউন গড়ে উঠেছে। নিচ তলায় কেমিক্যাল গোডাউন আর উপরে মানুষের বসবাস, এর মানে অগ্নিকুন্ডেই বসবাস। এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

উলেস্নখ্য, গত বছরের ৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে বিস্ফোরক প্রতিরোধ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সিনিয়র সচিব, সচিব এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০২২ সালের আগে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না। পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম-কারখানার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। মুন্সীগঞ্জে স্থানান্তর করা যাবে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬০০। আর ১০৭টি টঙ্গী ও শ্যামপুরে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থানান্তর করা যাবে। এরপরও অন্তত ১৩০০ কেমিক্যাল গুদাম-কারখানা থাকবে। সেগুলো কোথায় স্থানান্তর হবে, সে বিষয়ে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

১০ বছর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার 'নিমতলী ট্র্যাজেডি'র পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কেমিক্যাল গুদাম-কারখানা স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু নানা প্রক্রিয়ার অজুহাতে স্থান নির্ধারণের পরও অদ্যাবধি স্থানান্তরিত হয়নি একটিও গুদাম বা কারখানা। ওই সময় রাসায়নিক গুদাম থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে মারা গিয়েছিল ১২৪ জন। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে নিমতলী থেকে এক কিলোমিটার দূরে চুড়িহাট্টায় ঘটে আরেকটি অগ্নিকান্ড। যেখানে মারা গিয়েছিল ৭৮ জন। সেটিও ঘটেছিল রাসায়নিক পদার্থ থেকে। এরপরও টনক নড়েনি কারও। ঢিমেতালে চলছে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম-কারখানা স্থানান্তর কার্যক্রম। কেউ এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না-কবে নাগাদ সরানো হবে এসব কারখানা।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলী দুর্ঘটনার পর থেকে পুরান ঢাকার রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু লাইসেন্স ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে চলছে রাসায়নিক ব্যবসা। বর্তমানে পুরান ঢাকায় যে ২ হাজার রাসায়নিক গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সবের ট্রেড লাইসেন্স না থাকার পরও তারা দিব্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। যা পরিণতি ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। দুর্ঘটনায় তারা অকালে মারা যাচ্ছেন।

আমরা মনে করি, অতিদ্রম্নত রাসায়নিক গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরান ঢাকা থেকে সরাতে হবে। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এর বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে