নারীর গড় আয়ু ৭৫, পুরুষের ৭১

জীবনমান উন্নত হোক

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, দেশে নারীর গড় আয়ু ৭৫ আর পুরুষের ৭১। বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু অন্তত চার বছর বেশি- এমনটি জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। সংস্থাটির ২০২১ সালের বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭৫ বছর, আর পুরুষের ৭১ বছর। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য যে, প্রতিবেদনে বাংলাদেশবিষয়ক যে পরিসংখ্যান ও তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে সাধারণভাবে ব্যবহৃত পরিসংখ্যানের অমিল আছে- এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। কেননা, গত বছর বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ছয় বছর বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো-বিবিএস। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা (আনুমানিক) ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৬৫ লাখ, যেখানে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭১ দশমিক এক এবং নারীর ৭৪ দশমিক দুই বছর ছিল। আমরা বলতে চাই, এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে- যা ইতিবাচক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। কেননা, এটা আমলে নেওয়া সমীচীন, শিশুমৃতু্যর হার কমে আসায় এবং দেশে জটিল রোগের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়াকে এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা- এমনটিও জানা গেছে। ফলে শিশুমৃতু্য কম হওয়া, জটিল রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে যদি গড় আয়ু বাড়ে তবে বিষয়টি সুখকর। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এগুলো আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। প্রসঙ্গত, আমরা বলতে চাই, ষাটের দশকের শুরুতে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৬ বছর। ফলে গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টি লক্ষ্যণীয়- যা বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যবহুল দেশের জন্য স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক। এর আগের বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে সরকারের বিভিন্ন সময়ের কার্যকর পদক্ষেপ এবং সুপরিকল্পিত উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করায় জাতিসংঘ কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ এখন পোলিওমুক্ত দেশ। আর বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি কর্তৃক ডায়রিয়া এবং কলেরার প্রতিষেধক খাবার স্যালাইন আবিষ্কার; খাবার স্যালাইন বানানোর প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানামাত্রিক ঘটনাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে গড় আয়ুও বাড়ছে- যা অব্যাহত রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা মনে করি, পুষ্টিকর খাদ্য, ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা অপরিহার্য; কিন্তু দীর্ঘ জীবনের জন্য এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিচর্যার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী বতর্মানে গুণগত স্বাস্থ্য বা জীবন এবং সংখ্যাগত জীবন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শুধু গড় আয়ু বাড়ানো মুখ্য নয়, বরং গুণগত জীবনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া স্বাভাবিকভাবেই জরুরি বিষয়। বলাই বাহুল্য, মানুষের আয়ু বেশি হলে সমাজে অবদান রাখার পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু স্বাস্থ্যের গুণগত মান ভালো না হলে গড় আয়ু বেশি হলেও ভালো ফল পাওয়া দুষ্কর। ফলে গুণগত জীবন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথ পরিক্রমায় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবতর্ন এসেছে- যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে সামগ্রিক বিষয় আমলে নিয়ে জীবনের গুণগত মান নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতসহ দেশের নানান খাতের সফলতা আমাদের জীবন প্রত্যাশাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। এখন দেশের মানুষের জীবনমান আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়া গেলে আয়ু বৃদ্ধির সুফলকে কাজে লাগানো যাবে।