শিক্ষা পরিস্থিতি যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব ভয়ানক অবস্থার মুখোমুখি। দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে। এছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের প্রভাবে যেমন মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি বিপর্যস্ত হয়েছে প্রত্যেকটি খাত। শিক্ষা খাতেও পড়েছে এর ব্যাপক প্রভাব। করোনার থাবায় লন্ডভন্ড দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাসূচিও। আর স্বাভাবিকভাবেই এতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ৫ কোটি শিক্ষার্থী। সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের অভিভাবকরাও। প্রসঙ্গত এটা বলা দরকার, গত এক বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে প্রায় দেড় বছরের সেশন জটের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজগুলোতে লেগেছে পরীক্ষা জটও। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। বলা দরকার, আগামী ২৩ মে থেকে সীমিত আকারে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২৭ মে থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাও অনিশ্চয়তার মুখে। একইসঙ্গে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিও। এছাড়া এটাও বিবেচ্য যে, শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সংসদ টেলিভিশনে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস সম্প্রচার করছে। একইভাবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাস টেলিভিশন ও বেতারে সম্প্রচার করা হচ্ছে। গত বছরের মে মাস থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা ও জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু আমলে নেওয়া দরকার, প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা, ধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তির উচ্চমূল্যের কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পক্ষেই অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না- এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাতে যে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। উলেস্নখ্য, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাবর্ষের প্রথম চার মাস চলে গেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কতদিন চলে তা এখনো অনিশ্চিত। তাই যখনই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল হবে, তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে হবে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এমন মতও উঠে আসছে যে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই বাজেট আসছে, বাজেটে শিক্ষা খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কি করা হবে বা করতে হবে, তা এখনই নির্ধারণ করতে হবে। সঠিক তথ্য নিয়ে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নানা ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে করোনাকালীন সময়ে। আর এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার পথ খুঁজতে হবে। শিক্ষাবিদরা যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন সেগুলো আমলে নেওয়ার পাশাপাশি বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যখন এমন বিষয়ও আলোচনায় আসছে যে, করোনার কারণে শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে, এটি মাথায় নিয়ে কয়েক বছরের জন্য 'শিক্ষা পুনঃউদ্ধার' কর্মসূচি হাতে নিতে হবে- তখন এটিও আমলে নিতে হবে নীতি নির্ধারকদের। সর্বোপরি বলতে চাই, করোনায় দেশে সাড়ে ১১ হাজার মৃতু্য ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। করোনার কারণে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় শিক্ষা খাত সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিয়ে কীভাবে শিক্ষা খাতকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এমন অভিমত উঠে এসেছে যে, গত দুই দিনের করোনা পরিস্থিতি ভালোর দিকে। ইতোমধ্যে সংক্রমণ ও মৃতু্য দুটোই কমতে শুরু করেছে। তাই এখন থেকেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া যায়। ফলে সার্বিক শিক্ষা পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকুক এমনটি কাম্য।