বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুষম খাদ্যের অভাব বাড়ছে

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি
নতুনধারা
  ০৮ মে ২০২১, ০০:০০

সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে সুষম খাদ্য জরুরি। একদিকে মহামারিতে মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা বিপর্যস্ত। প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমণ ও লাশের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে এমন পরিস্থিতিতে যদি সুষম খাদ্যের অভাব বাড়ে তবে তা কতটা উৎকণ্ঠার- তা আমলে নেওয়া জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দীর্ঘ মহামারিকালে অনেকের চাকরি ও সঞ্চয়ের সঙ্গে কেড়ে নিয়েছে পরিবারের সদস্যদের সুষম খাবার। চলমান মহামারিতে কয়েক লাখ বাবা তার সন্তান ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারছেন না। আমরা মনে করি, একদিকে করোনায় দিশাহারা পরিস্থিতি অন্যদিকে বাড়ছে নানা ধরনের সংকট। আর্থিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় সুষম খাবারের ঘাটতি হলে সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি হুমকির মুখে পড়বে যা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশের অতি ধনী এক-চতুর্থাংশ মানুষের বাইরে সবারই আয় কমেছে করোনায়। এ ছাড়া অন্যান্য বিশেষ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খাবার বাবদ ব্যয় কমাতে হয়েছে এসব মানুষকে। আয় কমে যাওয়ায় অনেক পরিবার খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে বলে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বলেও জানা যায়। এসব গবেষণা বলছে, খাদ্যতালিকা থেকে অনেকেই আমিষ, ফল বা অন্যান্য উপকরণ বাদ দিচ্ছেন। অনেক পরিবারে সাধারণ খাবারও কম খাওয়া হচ্ছে। ফলে এ পরিস্থিতির ভয়াবহতা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর 'আরবান সোসিও-ইকোনমিক সার্ভে'র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ খাবার ব্যয় কমিয়ে মহামারিকালে বর্ধিত ব্যয়ের জোগান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া ২২ শতাংশ পরিবার কম খাবার খায়, আবার ১৭ শতাংশ পরিবার নিম্নমানের খাবার খায়। মহামারির শুরুতে এসব পরিবার স্বাভাবিক ও সুষম খাবার গ্রহণ করত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, সুষম খাবার ও পুষ্টি নিয়ে সৃষ্ট এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। কেননা সুষম খাবারের জোগান কম হলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে যা আশঙ্কাজনক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় প্রায় ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ মানুষ চিন্তিত থাকেন। পছন্দের খাবার খেতে পায় না ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ মানুষ। আর প্রয়োজনের তুলনায় খাবার খায় প্রায় ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ মানুষ। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, খাবারের বৈচিত্র্য ও পরিমাণ কমে আসায় পুষ্টি পরিস্থিতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরাও। কেননা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই জনবল দিয়ে জাতীয় উৎপাদনশীলতা বা জিডিপির উন্নতি প্রায় অসম্ভব বলেও আলোচনায় আসছে। এ ছাড়া সুষম খাবারের অভাবে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশও চরমভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর সুষম খাবার নিশ্চিত না হলে এসব শিশুর মেধার বিকাশ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে এমন বিষয়ও আলোচনায় আসছে। ফলে এর ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে।

আমরা বলতে চাই, পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতি রোধে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা- যা আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা বিশেষ করে শহরের বস্তি এলাকাকে কেন্দ্র করে খাদ্য বিতরণের পাশাপাশি শিশুখাদ্য বিতরণের পরামর্শও উঠে এসেছে। এ ছাড়া এই পরিস্থিতিতে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। ফলে সুষম খাদ্যের বিষয়টি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ জারি থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে