দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বিধিনিষেধ চলতি মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কার্যকর ও স্থায়ী পন্থা হলো টিকাদান। দেশে ৭ ফেব্রম্নয়ারি গণটিকাদান শুরুর পর দ্বিতীয় ডোজের জন্য গত ৫ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠানো শুরু হয়। এ ধারাবাহিকতায় ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগও শুরু হয়। কিন্তু আমলে নেওয়া দরকার, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্তসংখ্যক মজুত না থাকায় টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে- এমন বিষয় সামনে আসে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যুদস্ত ভারত সব ধরনের টিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায়, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড সময়মতো বাংলাদেশে আসছে না। এ অবস্থায় প্রথম ডোজ স্থগিত করে দেশে এখন শুধুই দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারের হাতে যে পরিমাণ টিকা আছে, তাতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ সময়মতো দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ জারি রাখার বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণ সুরক্ষা পেতে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয়টি ১২ সপ্তাহের মধ্যে নিতে হবে। এর পরে নিলে সুরক্ষা কিছুটা কমে যেতে পারে। ফলে প্রথম ডোজ নেওয়া মানুষ চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কেননা প্রথম ডোজ কোভিশিল্ড নেওয়ার পর, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি কিংবা অন্য টিকা নেওয়া ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে এ বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এ পরিস্থিতে সরকার অন্য দেশের তৈরি ভ্যাকসিনের পাশাপাশি দ্রম্নত সময়ে আরও অন্তত ১৩ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকার কোভিশিল্ড টিকা সংগ্রহের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলেও জানা গেছে, যা ইতিবাচক।
লক্ষণীয়, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় ডোজের টিকা কম পড়ার ঝুঁকি অনেক আগে ধরা পড়লেও সরকার প্রথম ডোজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট দেরি করেছে। টিকা সংগ্রহে দুর্বল পরিকল্পনা, বিকল্প উৎসের প্রতি কম মনোযোগ এবং ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার জন্য দায়ী বলে তারা মনে করছেন। আমরা বলতে চাই, এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটা আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে। জানা গেছে, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনিকার টিকা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার যদি রাশিয়া বা চীনের টিকা আমদানি করে, তাহলে কি সেই টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত হবে কিনা; তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে। ফলে এই বিষয়টিও আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ মানুষের ভেতর যেন সচেতনতা বাড়ে সেই দিকটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি টিকা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। কেননা এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিল, সংক্রমণ দূর করতে দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অন্তত ১২ থেকে ১৩ কোটি মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া জরুরি- যা এড়ানো যাবে না। ফলে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাসহ টিকা প্রাপ্তির সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এরই মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ জন। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬ জন। ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হওয়ায় আপাতত টিকার বাইরে থাকছেন নিবন্ধিত ১৪ লাখের বেশি মানুষ। আর ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ জনের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে- এমনটি জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। দ্বিতীয় ডোজের উদ্বেগ নিরসন এবং সামগ্রিকভাবে টিকা কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।