অক্সিজেন জেনারেটর আনার উদ্যোগ

চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ১১ মে ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভারত থেকে হঠাৎ অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিদেশ থেকে অক্সিজেন জেনারেটর আনার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে অক্সিজেন জেনারেটর আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন নিয়ে আপাতত কোনো সংকট নেই। বর্তমানে যে পরিমাণ অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে আড়াই থেকে তিনগুণ অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে হাইফ্লো ন্যাজেল ক্যানুলা ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পর্যাপ্তসংখ্যক সরবরাহ করা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা এখন ২০ হাজারের বেশি রয়েছে। করোনা নমুনা শনাক্তে ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪৩টি করা হয়েছে। ভারতীয় যে ভ্যারিয়েন্টটি এসেছে সেটিকে সতর্কতার সঙ্গে দেখা উচিত। এর প্রতি আমাদের বিশেষ মনোযোগ আছে। দেশবাসী ভয় না পেয়ে এ পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারলে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের যে স্থিতি অবস্থা রয়েছে তা ধরে রাখা সম্ভব হবে। আমরা মনে করি মানুষ সচেতন না হলে সংক্রমণ ও মৃতু্য যে কোনো সময় বেড়ে যেতে পারে। গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এটি ইতিবাচক হলেও এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। কারণ রাজধানী থেকে গাদাগাদি করে গ্রামের বাড়ি ফেরার ঘটনা উদ্বেগজনক। এর ফলে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের যে সরকারি উদ্যোগ তা ভাটা পড়তে পারে। ভারতের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় কবে নাগাদ আবার অক্সিজেন আমদানি করা যাবে, তা অনিশ্চিত। তবে দেশে রোগী কমে যাওয়ায় আমদানি বন্ধের ফলে ধাক্কা লাগবে না বলে মনে করছে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিল্প-কারখানার অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হয়েছে দেশের বেশির ভাগ অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশকে। কয়েকদিন আগে অক্সিজেনের চাহিদা ৪০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় দৈনিক উৎপাদিত ৯০ টনের পুরোটাই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দিতে হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেরই লাগছে অক্সিজেন। সংক্রমণ যদি আবার বেড়ে যায়, তখন হয়তো সংকট দেখা দিতে পারে। এটা সত্য- দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ রোগী বাড়লে অক্সিজেনের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। তাই সরকারকে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে অক্সিজেনের ঘাটতি না পড়ে। অভিযোগ রয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের জিম্মি করে অক্সিজেনের দাম বেশি রাখছে। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারের তদারকি থাকতে হবে। করোনাকালে মানুষকে জিম্মি করা অমানবিক। দোকান-পাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতাও দৃশ্যমান। সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ এলে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রতিদিন চার লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে চার হাজার। এর ধাক্কা যদি আমাদের দেশে লাগে তবে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। যে কারণে সরকার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। কেবল পণ্য পরিবহণ চলবে। আশঙ্কাজনক সংবাদ হচ্ছে- দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে যে ভারতীয় ট্রাক আসছে, ট্রাকের চালক ও হেলপার যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে পণ্য খালাস হওয়ার আগ পর্যন্ত। এটা খুবই বিপজ্জনক বার্তা। স্থলবন্দর কর্র্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ মাস্ক পরতে চায় না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার তো বালাই নেই। দোকান-পাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার পর এই চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছে। দেশের পরিস্থিতি যাতে ভয়াবহ রূপ ধারণ না করে সে জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।