ঈদ মানে সবার মুখে হাসি

ঈদে অনেকে হয়তো অনেকভাবে অর্থ অপচয় করে থাকি। কিন্তু এ অপচয় করা অর্থগুলো কোন পরিবারকে দিলে তাদের ঈদ হবে আনন্দের।

প্রকাশ | ১২ মে ২০২১, ০০:০০

তামান্না আক্তার
ঈদ মুসলমানদের আনন্দঘন একটি দিন। দলমতনির্বিশেষে সব মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদযাপন করে দিনটি। এ দিনে বিশ্বের সব প্রান্তের মুসলমান ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে যায়। আর প্রত্যেক দেশ নিজ নিজ সাজে সজ্জিত হয়ে মহান আলস্নাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠানের কর্মসূচির বিভিন্নতা থাকলেও এ দিনের মহান উদ্দেশ্য হলো আলস্নাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সব ভেদাভেদ ভুলে একটি শান্তির পৃথিবী গড়ে তোলা। ঈদের দিনের আনন্দ একটি দিনেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং কয়েক সপ্তাহ পূর্ব থেকে খুশির আমেজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের দিনকে কেন্দ্র করে সবার মাঝে থাকে প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার বাসনা। তাই নাড়ির টানে দূরদূরান্ত থেকে প্রিয়জনের কাছে ফিরে আসতে চেষ্টা করে সবাই। কয়েক দিন পূর্বে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সজ্জিত করা হয়। সবাই মিলে দলবেঁধে ঈদের আগমনী গান গাইতে থাকে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মাঝে থাকে অন্যরকম আবেগ। ঈদের চাঁদ দেখা দিলে তারা গাইতে শুরু করে- 'কালা গরুর কালা শিং রাত পোহালেই ঈদের দিন।' তাদের সুরে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। ঈদের আগে ভাগে আরো শুরু হয় তাদের কার্যক্রম- যার মধ্যে অন্যতম আতশবাজি জ্বালানো, পটকা ফোটানো, ঈদগাহ সাজানো ইত্যাদি। সবার মাঝে একটাই কথা ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে দুঃখ ভুলে যাওয়ার দিন। ঈদের এ বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি পরিবারে আসে নতুনত্বের ছোঁয়া। তাই সবাই পুরাতন দুঃখ, জ্বরা ভুলে নতুনভাবে সজ্জিত হয়, সবাই নিজ নিজ আবাসকে করে মলিনতামুক্ত আর নিজেরাও হয়ে ওঠে এক শালীনতার প্রতীক। কিন্তু সমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষের মাঝে ঈদের আমেজ থাকে ভিন্ন মাত্রার। কারো ঈদ বিলাসিতার, তো অন্য কারো বোবা কান্নার। এ যেন চিরন্তন এক দৃশ্য। অধিকাংশ সমাজে লক্ষ্য করা হয় ধনী ও প্রভাবশালীদের ঈদ আনন্দ হয় আড়ম্বরপূর্ণ। তাদের ঈদ উদযাপন হয় বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান, হরেক রকমের খাবার কিংবা বাহারি ডিজাইনের পোশাকের সাজে। নানা রকম অনুষ্ঠান আর আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে হয় আনন্দঘন মুহূর্ত। কিন্তু গরিব ও অসহায় পরিবারের চিত্র ম্স্নান হয়ে ধরা দেয়। গরিবের ঘরে নেই নানান স্বাদের খাবার কিংবা রঙিন কাপড়ের ছড়াছড়ি। অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো তাদের দিনটি উদযাপিত হয়। কিন্তু দিনটি দেখিয়ে দেয় বৈষম্যের কঠিন চিত্র। একদিকে আনন্দের বারি ঝরতে থাকলেও অন্য দিকে থাকে অশ্রম্নসিক্ত জল। ঈদে নূ্যনতম নতুন পোশাক কিনতে পারে না অনেক পরিবার। এমনকি ভালো কিছু খাবারের আয়োজনও হয় না অনেক পরিবারে। এই অসহায়, গরিব পরিবারের কাছে এটা আরো বেশি কষ্ট বয়ে আনে। কারণ আশপাশে আনন্দের চিত্র দেখে গরিবের কষ্ট আরো বেশি হয়। এছাড়াও বর্তমানে মহামারি পরিস্থিতিতে বৈষম্যের চিত্র প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ গরিবের আয়ের উৎস খুঁজে পাওয়া দায়। লকডাউন আর মহামারির ভয়ে তাদের বেহাল দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে লকডাউনে অনেক পরিবারে দু'মুঠো খাবার জোগাড় করতে বেগ পেতে হচ্ছে। সেখানে দামি খাবার কিংবা একটু ভালো কাপড় তাদের কাছে স্বপ্ন হলেও জোগাড় করা সম্ভব নয়। অনেক পরিবার লকডাউনের কারণে সম্পূর্ণ কর্মহীন দিন অতিবাহিত করছে, বিশেষ করে দিন আনে দিন খায় এদের সঞ্চয় বলে কিছু থাকে না। দিনের উপার্জন দিয়ে খাবারের বন্দোবস্ত হয়, সেখানে নতুন কাপড় কিংবা দামি খাবার কিনা অসম্ভব বৈকি! তাদের কাছে ঈদ-আনন্দ এখন কেবল দু'মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকা। কিন্তু এমন বৈষম্যপূর্ণ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কঠোর ব্যবস্থাপনার দরকার নয় বরং সহানুভূতির হাত প্রসারিত হলেই দুঃখের মেঘ কেটে ঝরবে খুশির জোয়ার। ঈদে অনেকে হয়তো অনেকভাবে অর্থ অপচয় করে থাকি। কিন্তু এ অপচয় করা অর্থগুলো কোন পরিবারকে দিলে তাদের ঈদ হবে আনন্দের। তাই আমরা ঈদ আনন্দে স্বার্থপর না হই। বরং আমার প্রতিবেশীর ঈদ কেমন কাটছে খোঁজ নেওয়া দরকার। আমাদের একটু সহানুভূতির হাত হতে পারে কারও আনন্দের বাহন। তাই ঈদ হোক সবার মুখে হাসির প্রতীক। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু সদয় হলেই কারো ঈদ হবে না দুঃখ কিংবা আফসোসের। তখন হয়তো সবাই সম্মিলিতভাবে গাইতে পারব- "ঈদ মানে ছোট-বড় সবার মুখে হাসি, ঈদ মানে একসাথে আনন্দে মাতামাতি। তামান্না আক্তার : কলাম লেখক