ঈদে হাসুক প্রতিটা প্রাণ

ঈদ আনন্দ ধনী-গরিব সবার জন্য। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সুবিধাবঞ্চিতদের পাশ কাটিয়ে ঈদ আনন্দ পূর্ণতা পাবে না।

প্রকাশ | ১২ মে ২০২১, ০০:০০

আমজাদ হোসেন হৃদয়
সারা বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর অনাবিল আনন্দ-উলস্নাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। মহামারি করোনার মধ্যেও ঈদ মুসলমানদের মাঝে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু যারা দিন আনে দিন খায়, যাদের নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। ওদের ঈদ মানে শুধুই ঈদ, ঈদের আনন্দ নেই। নিজের বাস করার মতো জায়গাই তো নেই! ঈদে কেনাকাটা করার প্রশ্নও তো উঠবে না। আমাদের আশপাশের এমন অনেক সুবিধাবঞ্চিত আছে, যাদের ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সামর্থ্য নেই। তাদের মুখে হাসি ফুটানোর দায়িত্ব আমাদের। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ৪২ শতাংশে। সানেমের জরিপ অনুসারে ২০১৮ সালে এটি ছিল ৯.৪ শতাংশ। আর ২০২০ সালে মহামারির প্রভাবে তা বেড়ে হয়েছে ২৮.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে গ্রামাঞ্চলে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ১১.২ শতাংশ। মহামারির সময়ে ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩.২ শতাংশ। ২০১৮ সালে শহরাঞ্চলে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ৬.১ শতাংশ- যা ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ১৯ শতাংশ। এছাড়াও আরো এক গবেষণায় দেখা যায় দারিদ্র্যের চিত্র। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, করোনার কারণে বেড়েছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা, আয় কমেছে মানুষের। ফলে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাদের। আমরা চাইলে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারি। একটি সমাজে ধনী-দরিদ্রের হার সমানুপাতিক বা দরিদ্রের হার কিছুটা কম। একজন ধনী ব্যক্তি যদি অন্তত একজন দরিদ্রের পাশে দাঁড়ায় সে আর দরিদ্র থাকে না, তাকে না খেয়ে থাকতে হবে না। পাশাপাশি সরকার যদি প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার অনেকটাই হ্রাস পাবে। আশার দিক হলো, বাংলাদেশ সরকার গৃহহীনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সে পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে হাসি ফুটবে লাখো মানুষের মুখে। আরেকটি আশা জাগানিয়া বিষয় হলো- বাংলাদেশের তরুণরা আজ দেশের আনাচে-কানাচে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠা করছে স্কুল, বস্নাড ব্যাংক, পস্নাজমা ব্যাংক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত ও দলীয় উদ্যোগে। এসব সংগঠন থেকে সাধ্যমতো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা। বিশেষ করে পথশিশুসহ সব ধরনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অক্ষর জ্ঞান দান, নতুন জামা পরার সাধ মিটানোসহ নানাভাবে তাদের পাশে থাকছেন তরুণরা। বলতে গেলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছে এ দেশের তরুণরা। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়- আমাদের দেশে যেভাবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়, সেভাবে মূলত দারিদ্র্য নির্মূল হবে না। এমনভাবে তাদের সহযোগিতা করা উচিত, যাকে একবার সহযোগিতা করা হবে তার দ্বিতীয়বার সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ সাহায্যগ্রহণকারীকে একক, সামাজিক কিংবা সরকারি প্রচেষ্টায় একবারেই স্বাবলম্বী করে তোলা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তার উল্টো দিক। একটি সুবিধাবঞ্চিত পরিবারকে আমরা মুষ্টিকয়েক খাদ্যসামগ্রী উপহার দিই, পোশাক উপহার দিই, কিংবা কয়েক হাজার টাকা উপহার দিই। একটি পরিবার কিংবা একজন মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার মতো সহযোগিতা আমরা করি না, যার ফলে তারা দারিদ্র্যই থেকে যায়। ঈদ আনন্দ ধনী-গরিব সবার জন্য। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সুবিধাবঞ্চিতদের পাশ কাটিয়ে ঈদ আনন্দ পূর্ণতা পাবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আসুন আরেকবার তাদের পাশে দাঁড়াই। আমরা চাইলে তাদের ঈদকেও আনন্দময় করে তুলতে পারি। সামান্য উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারি। সর্বোপরি সরকার এবং আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় নির্মূল হোক এ দেশের দরিদ্রতা, হাসুক প্রতিটি প্রাণ- এমনটি প্রত্যাশা। আমজাদ হোসেন হৃদয় :কলাম লেখক