শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পবিত্র ঈদুল ফিতর

সবার জীবনে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুনধারা
  ১২ মে ২০২১, ০০:০০

বছর ঘুরে আবারও পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের মধ্যে সমাগত। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এক অনাবিল আনন্দের মহাসম্মিলন এই পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এ উৎসব বিশ্বজুড়ে মুসলিম সমাজে বিশেষ আনন্দঘন পরিবেশে উদ্‌যাপন করা হয়। মুসলমানদের ঐক্যের পথে, কল্যাণের পথে, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত করে ঈদুল ফিতর। এই দিনের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হলো, সামর্থ্যবানদের দ্বারা ফিতরা-সদকার মাধ্যমে গরিবের হক আদায় করা। এতে অর্থনৈতিক বৈষম্য যেমন দূর হয়, তেমনি সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকাশ পায়। পবিত্র রমজান মাসের যে সংযমের অনুশীলন, তা জীবন চলার সব ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘনের নেতিবাচক প্রবণতা থেকে রক্ষার শিক্ষা দেয়। অন্যায়, অবিচার, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, হানাহানিসহ মানুষের নেতিবাচক প্রবণতার রাশ টেনে ধরে। ঈদ যে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে, তার মর্মমূলে আছে শান্তি ও ভালোবাসা। ফলে ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে যে মিলন ও শুভবোধের চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর আসে ইবাদত ও মানবতার কল্যাণের বার্তা নিয়ে। ঈদের আগের রমজান মাসটি হচ্ছে সংযম ও প্রশিক্ষণের। ফিতরা প্রদান, জাকাত আদায় ও ঈদের নামাজের ভেতর দিয়ে এক অপরিসীম আনন্দময় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন হলো ঈদুল ফিতর। বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য রমজানের শিক্ষা অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখানে যেমন ধনী-গরিবের ভেদাভেদ থাকে না, তেমনিভাবে ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্যদিয়েই ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায়। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্যদিয়ে যে সংযমের শিক্ষা অর্জিত হয়, তা যেন ঈদের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়; ঈদের আনন্দকে সঙ্গী করে বাকি সময় পথচলায় সহায়ক হয়।

প্রসঙ্গত এটাও উলেস্নখ্য যে, প্রতি বছর আনন্দঘন পরিবেশে ঈদুল ফিতর পালন করা হয়। ঈদগাহে ধনী-গরিব নির্বিশেষে এক কাতারে নামাজ আদায় শেষে কোলাকুলির মাধ্যমে স্থাপিত হয় মহান এক সামাজিক বন্ধন। সবাই আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। নাড়ির টানে মানুষ ছুটে যায় নিজভূমে। পারস্পরিক সাক্ষাতে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবারে পবিত্র ঈদুল ফিতর এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সারা বিশ্বই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং মানুষের জীবনের স্বাভাবিকতা থমকে গেছে। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃতু্যর সংখ্যাও। সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এবারে এমন এক প্রেক্ষাপটে পবিত্র ঈদুল ফিতর এসেছে যখন সারাদেশ করোনা আক্রান্ত।

এ ছাড়া প্রত্যেক বছর খোলা আকাশের নিচে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করলেও এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি নির্দেশনা মতে মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রত্যেককে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বছরেরও ঈদের জামায়াত বাইরে হয়নি করোনার কারণে।

মনে রাখা দরকার, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে জরুরি হলো বিচ্ছিন্নতা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। সঙ্গত কারণেই প্রত্যেকেই সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলবে এমনটি প্রতাশিত।

ইসলাম শান্তি এবং সাম্যের ধর্ম, ইসলাম বৈষম্য সমর্থন করে না। পবিত্র রমজান যে চিত্তশুদ্ধির শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষায় আলোকিত হোক চারপাশ। দূর হোক সব অন্ধকার। সবাই ভুলে যাক হিংসা-বিদ্বেষ। সবার জীবনে ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। করোনার প্রকোপ থেকে দেশের মানুষ রক্ষা পাক। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে