বাসে পেট্রলবোমা, ককটেল

ঘৃণ্য এ পঁায়তারা রুখতে হবে

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করে তোলার ঘৃণ্য পঁায়তারা শুরু হয়েছে। একুশে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর, বুধবার গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ কমর্সূচি থেকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার টিএমএসএস পেট্রলপাম্পের কাছে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় এক নারীসহ তিন যাত্রী আহত হন। অন্যদিকে একই সময়ে নারায়ণগঞ্জের অন্তত বিশটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পথচারী এক শিশু আহত হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদশর্ন করেন বিএনপি নেতাকমীর্রা। এতে জনমনে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে জামালপুরে বিএনপির নেতাকমীর্রা বিক্ষোভ প্রদশের্নর চেষ্টা চালালে পুলিশের লাঠিপেটায় ১০ জন আহত হন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ককটেলসহ এবং মাদারীপুর ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে অধর্শত বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আদালতের রায়ের পর পেট্রলবোমা হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের এই ঘৃণ্য ঘটনা দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করে তোলার পঁায়তারা ছাড়া অন্য কিছু নয়। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সঙ্গত কারণেই উদ্বেগ ও আতঙ্কের। বলার অপেক্ষা রাখে না, আদালতের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং আহত হন শতাধিক নেতাকমীর্। অনেকে পঙ্গত্ববরণ করেন। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এ ঘটনা অত্যন্ত জঘন্য হিসেবে চিহ্নিত। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এ হামলা চালানো হয় এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ‘জজ মিয়া’ নাটকের কথাও দেশবাসীর অজানা নয়। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- ‘পাপে ছাড়ে না বাপেরে’। আদালতের রায়ে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। হামলার পরিকল্পনাকারী, অথর্ সরবরাহকারী এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়েই শনাক্ত হয়। আর আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের সাজার রায় হয়। ভয়াবহ ও নৃশংসতম এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রত্যাশা করেছিলেন দেশের জনগণ। রায়ে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলনই ঘটেছে। সুতরাং আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে সারাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য সহিংস হামলার ঘটনা সঙ্গত কারণেই মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। জানা গেছে, রায়ের পর সারাদেশে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য সবোর্চ্চ সতকর্তা অবলম্বন করা হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। এরপরও রায়ের ঘটনাকে পুঁজি করে সারাদেশে যারা নাশকতার চেষ্টা চালিয়েছে, তাদের অপরাধ অমাজর্নীয় বলেই প্রতীয়মান হয়। বুধবার সারাদেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতার বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক এ নাশকতার ঘটনাগুলো ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াওয়ে রাজনীতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। এ সময় বহু মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পদহানির কথা দেশবাসীর বিস্মৃত হওয়ার কথা নয়। ফলে বুধবারের ঘটনায় জনমনে বোমা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। আবার বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে জনগণকে প্রতিপক্ষ করে তুলে জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে, এটিও আলোচিত। দেশ ও জনগণের শান্তি বিনষ্টকারীরা যে জনবিচ্ছিন্ন হবেন এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতাথের্ রাজনৈতিক দলগুলো দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে নানামুখী ঘৃণ্য ঘটনার জন্ম দেবে, তাও জনগণের প্রত্যাশা হতে পারে না। সবোর্পরি বলতে চাই, দেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের মযার্দাও বাড়ছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে হঁাটছে দেশ। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতির এ ধারা অব্যাহত রাখতে যে কোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে মোকাবিলা করাই হবে যুক্তিযুক্ত। মনে রাখা দরকার, আমাদের আর পেছন ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। ফলে দেশ থেকে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন করতে হবে। যারাই দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত হবে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে দ্রæত। সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা দেশের সবর্স্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাযর্কর উদ্যোগ নিশ্চিত করুকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।