মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংকট ও আমেরিকার চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্য সংকটমুক্ত হতে পারছে না একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলছে। কিছুদিন আগে ফিলিস্তিন ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষের চিত্র বিশ্ব দেখতে পেল। যদিও এই সংঘর্ষ বর্তমানে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে যে এই সংকট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এরই মধ্যে আবার একটা ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটার নাম হলো ইরানের পরমাণু সমঝোতায় ফেরার আশঙ্কা। অর্থাৎ বর্তমানে ইরান ২০১৮ সালের যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করার পর এই পরমাণু সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পরমাণু চুক্তি বিস্তার নিয়ে আলোচনা করার আগে কীভাবে সংকট সৃষ্টি হলো সেটা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। তাহলে প্রথমে এই সংকটের প্রাথমিক ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইরান হলো মধ্যপ্রাচ্যে শিক্ষাপ্রধান একটা দেশ এবং এ দেশে রয়েছে অতি মূল্যবান খনিজ সম্পদ বলে পরিচিত তেল। সে তেলের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর শক্ত অবস্থান। পরাশক্তিগুলোর এমন অবস্থানের কারণে ইরান তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য পরমাণু কর্মসূচির দিকে মনোনিবেশ করেছিল। প্রথম ইরান ১৯৫৬ সালে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করে। ১৯৬৭ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় পরমাণু কেন্দ্রে ৫ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন চুলিস্ন স্থাপন করা হয়। আর তাদের পরমাণু শক্তির হাতেখড়ি শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ সেই সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রেজা শাহ পাহলভী যিনি মার্কিন সমর্থিত সরকার বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৭৩ সালে পাহলভী শাসনের পতনের পর ইরানে আয়াতুলস্নাহ খামেনি শাসন শুরু হওয়ার পর এই পরমাণু কর্মসূচি আমেরিকার কাছে গলার কাঁটা হয়ে ওঠে। কারণ এরপর থেকে আমেরিকা অবলোকন করতে থাকে যে মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া সুন্নি দ্বন্দ্ব রয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সঙ্গে ইসরাইল নামক রাষ্ট্র তো আছেই। এর পর থেকেই আমেরিকার কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কেমন করে আটকানো যায় এটা নিয়ে। ২৩ ফেব্রম্নয়ারি ২০১৩ পরমাণু প্রকল্প ব্যবহার করার মতো পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম খনিজ মজুত রয়েছে এমন নতুন খনির পাওয়ার কথা ঘোষণা দেন ইরান। তারা দেশের বিভিন্ন অংশে নতুন করে ১৬টি পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর থেকে আমেরিকা নড়ে বসে তারা ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় আমেরিকা। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৮ সালে ঘোষণা করে ইরানের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল সেখান থেকে বের হওয়ার। যার ফলে মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের আবার চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারণায় ঘোষণা দেন ইরানের সঙ্গে যে পরমাণু চুক্তি ছিল সেখানে আবার যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। নির্বাচনের এতদিন পরেও তা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্ননকেন বলেন ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে, তার এই বক্তব্য বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন এখনই যদি রাশ টেনে ধরা না হয় তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তেহরান পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলবে। কারণ গত এপ্রিলে নাতাঙ্‌জ পরমাণু কেন্দ্রে সফলভাবে ৬০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে ইরান। যদিও খামেনি বলেছেন তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে না। ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে একটা বড় সংকটের দিকে ধাবিত হবে। ইরানের এমন শক্তিবান হওয়ার ফলে সৌদি আরব নাখোশ হবে। আবার অন্যদিকে ইসরাইল ইরানের এমন ক্ষমতাবান হওয়াকে কখনোই স্বাভাবিকভাবে নেবে না। তাহলে মধ্যপ্রাচ্য যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রগুলো তাদের উপর নারাজ হবে যা আমেরিকা কখনোই হতে দেবে না। তাই তো আমেরিকার সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েেেছ পরমাণুর সমঝোতায় ফেরার। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু চুক্তিতে ফেরাতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। গত ২ জুন পঞ্চম দফায় আলোচনার পরও কোনো ধরনের সমাধান মেলেনি। যদি এখনি এ সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলা করা না যায় তাহলে ১৫ জুন নির্বাচনের পর বিষয়টা আরও কঠিন হবে বলে \হবিশেষজ্ঞরা মনে করছে। আর তাই আমেরিকা এই চুক্তির বিষয়ে যা করার দরকার সবকিছু ১৫ তারিখের আগে করতে চাচ্ছে। তা না হলে নতুন কেউ সরকার হলে হয়তো আর সহজে সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই বলা যায় আমেরিকার সামনে এখন অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ যা তার মধ্যপ্রাচ্য মিত্রদের উদ্বেগের বিষয়। এখন দেখার বিষয় হলো- আমেরিকা তার এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে কাটিয়ে ওঠে। জাফরুল ইসলাম শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়