বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেপরোয়া কিশোর গ্যাং দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে উঠতি বয়সি কিছু কিশোর- এমন খবর বিভিন্ন সময়েই পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। স্কুল-কলেজের গন্ডি পার হওয়ার আগেই কিশোরদের একটা অংশের বেপরোয়া আচরণ নানাভাবেই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্রসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে দাবি করেছের্ যাব। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে লালবাগ, ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ছয় জনের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর। তাদের কাছ থেকে ১৩টি ছুরি, দুটি ক্ষুর, দুটি বেস্নড, দুটি তালা ভাঙার যন্ত্র, দুটি গ্রিল কাটার যন্ত্র এবং আটটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়েই কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর আগে রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের লাগাম টানার মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ১২ দফা সুপারিশও তৈরি করেছিল। বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরেও কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি সামনে আসে। এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, কিশোরদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, প্রকাশ্যে ধারালো ছুরি, রামদা নিয়ে মহড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। এর আগেও কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। কিশোরদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া, অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে, যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।

উলেস্নখ্য, বিভিন্ন সময়েই কিশোর অপরাধীদের নানান তথ্য উঠে এসেছে। এমনটিও এর আগে আলোচনায় আসে, পেশাদার খুনি হিসেবে কিশোরদের ব্যবহার বাড়ছে। এ ছাড়া অপরাধ বিশ্লেষকরাও সতর্ক করেছিলেন, কিশোর গ্যাংদের সক্রিয়তা নিয়ে। মনে রাখা দরকার, নৃশংসতার জন্য মানুষ সমাজবদ্ধ হয়নি। বরং সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়ে মানবিক জীবন-যাপনের লক্ষ্যেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজের আজ এমন দুর্দশা কেন? যে কিশোরদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার তাদেরই কেউ কেউ যদি নানা মাত্রিক অপরাধে জড়িয়ে যায় তবে এর ভয়াবহতা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এর আগে সমাজ বিশ্লেষকরা এমন পরিস্থিতির জন্য সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি পরিবার ও শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়েও কথা বলেছেন। পরিবারগুলো বৈষয়িক উন্নতির জন্য এতটাই ব্যস্ত, সন্তানদের দেখভাল ও নৈতিক উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। নৈতিক চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার তেমন আয়োজন না থাকা এবং অপসংস্কৃতির প্রভাবে কিশোররা অবক্ষয়ের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে এমনটিও আলোচনায় এসেছিল। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, কিশোররা যেভাবে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে- এই প্রবণতা রোধে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। কিশোর গ্যাং কালচার রোধ করাসহ কিশোরদের সঠিক পথের অনুসারী করে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এর পাশাপাশি কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণ ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের সুপথে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা দূর হোক এমনটি প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে