দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

জুনে খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় এবং দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে আংশিকভাবে কঠোর লকডাউন কার্যকর থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটির মেয়াদ আরেক দফায় ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকার কয়েক দফা পরিকল্পনা করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ছে। ফলে করোনাকালে দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি সুখকর নয়। করোনার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে শিক্ষা সংকট চলছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় দারুণভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে সেশনজট, পরীক্ষা, ল্যাব ক্লাস, চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া, অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ব্যাপক হারে বেড়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা ভুগছেন পরিচয় সংকটে। ঘটেছে কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনাও। এটা সত্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবই এখন খোলা। প্রশ্ন হচ্ছে- আর কতদিন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সক্ষমতা বিবেচনা করে বিদ্যালয় খুলতে হবে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়ে। যে করেই হোক দেশের শিক্ষা সংকট দূর করতে হবে। তবে এটা সত্য, করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্থানীয় সংক্রমণ ঘটার পর গত দুই সপ্তাহে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো যৌক্তিক। তবে যে সব অঞ্চলে করোনার ঝুঁকি কম, সে সব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায় কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা। তাদের কেউ টিউশন করে কেউবা পার্টটাইম কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে এবং অনেকে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করছে, তেমনি তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিলেও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ ও ব্যয়বহুল ইন্টারনেটের কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তাছাড়া দীর্ঘদিন ঘরে বসে থেকে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পর্যুদস্ত। তারা এখন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দেশের উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছেছে। মানহীনতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের অভাব, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষা দিতে না পারা ও শিক্ষায় কম বিনিয়োগ ইত্যাদির কারণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বেকারত্ব কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের চিত্র অনেকটাই বিপরীত। এ দেশে শিক্ষিতের বেকার হওয়ার আশঙ্কা অশিক্ষিতদের তুলনায় বেশি। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। দেশের করোনার সংক্রমণ ও মৃতু্যহার কমলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি কড়াভাবে মেনে চলার শর্ত দিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব হল খুলে দেওয়া হোক। দেশের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এর অন্য বিকল্প নেই।