রোধে যথাযথ উদ্যোগ নিন
অবৈধ পথে বিদেশগমন
প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২১, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
অবৈধ পথে বিদেশগমনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না, মানব পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যার নাম। গরিব দেশগুলো এ সমস্যার নিত্যকার শিকার। বাংলাদেশের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। অভাবের তাড়নায় কিংবা পরিবারে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে, উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক মানুষ। উন্নত জীবনসহ নানা ধরনের ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পাচার করার পর তাদের জীবনেও নেমে আসছে করুণ পরিণতি। কারও কারও লাশ মিলছে, কারও আবার খোঁজও পাওয়া যায় না। অসৎ লোক এবং দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক মানুষের জীবন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তেই। সঙ্গত কারণেই এই পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর থেকে ৪৩৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার ও আটক করা হয়েছে। লিবিয়ার কোস্ট গার্ড গত বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগর থেকে তাদের উদ্ধার করে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মধ্যে ১৬৪ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন। আমরা মনে করি, যখন আবারও ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসন প্রত্যাশী ১৬৪ জন বাংলাদেশি উদ্ধারের ঘটনা ঘটল, তখন তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়ার দরকার সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
প্রসঙ্গত বলতে চাই, শুধু এবারই নয়- বিভিন্ন সময়েই সাগর থেকে বাংলাদেশি উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া অবৈধ পথে বিদেশ গমনের কারণে অনেকে নিখোঁজ হয়েছে। কেউ মারা গেছে, একের পর এক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। এর আগে লিবিয়ায় অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছিল, যার মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের গহিন অরণ্যে পাওয়া গিয়েছিল গণকবর। এরপর মালয়েশিয়াতেও পাওয়া যায় গণকবর। আর ওইসব গণকবরে পাওয়া গিয়েছিল অনেক বাংলাদেশির লাশ; যাদের অধিকাংশই মানব পাচারের শিকার। ফলে মানব পাচারে ভয়াবহতাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া এমন বিষয়ও এর আগে খবরে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের তিন পাশেই ভারতের সঙ্গে সীমান্ত থাকায় বেশিরভাগ মানব পাচারের গন্তব্য হয়ে থাকে ওই দেশের বিভিন্ন শহর। আর এর শিকার হচ্ছেন মূলত গরিব ও অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত নারীরাই। ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে সীমান্ত অতিক্রমের পরই তারা বুঝতে পারেন পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।
আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সাগরপথে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া নিয়ে যাওয়ার নামে মানব পাচারের ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে, উন্নত জীবন ও ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের ঘটনাতেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে মানব পাচার সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিলে যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা সুখকর নয়। এই উৎকণ্ঠাজনক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন সময়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে, মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যান। এছাড়া মানব পাচারের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন নারীরা। অনৈতিক কাজের জন্য নারীদের বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে গিয়ে ভারতে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলেও এর আগে খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু জীবন ও জীবিকার কারণে সচ্ছল জীবনযাপনের লক্ষ্যে মানুষ বিদেশগামী হতে চায়, সেহেতু গমনাগমন যাতে নিরাপদ এবং বৈধ হয় সেই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। মানব পাচারের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।